কচ্ছপ ও খরগোশের গল্পটির শেষে আর যা যা ঘটেছিল

0
227

কচ্ছপ আর খরগোশের গল্প আমাদের জানা। ইশপের গল্প।

এক ছিল খরগোশ। আরেক ছিল কচ্ছপ। খরগোশ বলল, ‘ভাই কচ্ছপ, তুমি এত ধীর কেন? তুমি কি রওনা দিয়ে কোথাও শেষ পর্যন্ত পৌঁছাও?’

কচ্ছপ বলল, ‘অবশ্যই। তুমি কি আমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে?’

তারা দৌড় প্রতিযোগিতায় নামল। খরগোশ দ্রুতই অর্ধেকটা পথ পাড়ি দিল। পেছনে তাকিয়ে দেখল, কচ্ছপের কোনো খবর নেই। সে ভাবল, একটু জিরিয়ে নিই। খরগোশ ঘুমিয়ে পড়ল। কচ্ছপ তাকে অতিক্রম করে চলে গেল শেষ প্রান্তে। তখন খরগোশের হুঁশ হলো। সে দৌড়ে শেষ দাগে পৌঁছানোর আগেই কচ্ছপ সেখানে পৌঁছে গেছে।

উপদেশ: স্লো অ্যান্ড স্টেডি উইনস দ্য রেস। ধীর কিন্তু স্থিরই প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়।

কিন্তু এই গল্পের পরে আরও কতগুলো ঘটনা প্রচলিত আছে। ইন্টারনেটেই সেসব পাওয়া যায়। ফেসবুকে একটু পরপর ভেসে ওঠে।

২. প্রথমবার দৌড় প্রতিযোগিতায় হেরে খরগোশ আবারও নিজেকে প্রস্তুত করল। একবার না পারিলে দেখো শতবার। সে আবারও কচ্ছপকে দৌড় প্রতিযোগিতায় আহ্বান জানাল। কচ্ছপ খুব করে অনুশীলন করল, চর্চা করল। ভালো প্রশিক্ষক আনল। শুরু হলো প্রতিযোগিতা। এবার আর খরগোশ ভুল করল না। মন দিয়ে প্রতিযোগিতা শেষ করল এবং অনায়াসেই দৌড়ে সে প্রথম হলো।

উপদেশ: শুধু চেষ্টা থাকলেই হয় না, প্রতিভাও লাগে।

৩. কচ্ছপ বলল, ‘এবার আমরা নতুন একটা রাস্তায় দৌড়াব।’ খরগোশ রাজি। শুরু হলো প্রতিযোগিতা। কিন্তু এ পথে ছিল একটা খাল। কচ্ছপ সেটা সাঁতরে পার হলো। খরগোশ পারল না। জয়লাভ করল কচ্ছপ।

উপদেশ: ক. সব পথ সবার জন্য নয়। শুধু প্রতিভা দিয়ে জয়লাভ করা যায় না। খ. বিজয়ের বিকল্প পথ অনুসরণ করতে হয়।

৪. এবার খরগোশ এবং কচ্ছপ বলল, ‘আমরা প্রতিযোগিতা করব না, সহযোগিতা করব।’ ঠিক হলো, খরগোশ প্রথমে কচ্ছপকে পিঠে করে খালের পাড় পর্যন্ত নিয়ে যাবে। তারপর কচ্ছপ খরগোশকে পিঠে করে খাল পার করে দেবে।

এভাবে পরস্পরকে সহযোগিতা করার ফলে দেখা গেল, অনেকটা পথ তারা খুব অল্প সময়েই পাড়ি দিতে পেরেছে।

উপদেশ: একেকজন একেক বিষয়ে দক্ষ হয়, আরেকটা বিষয়ে দুর্বল হয়। কাজেই পরস্পরকে সহযোগিতা করে দলগতভাবে কাজ করলে সাফল্য সহজেই ধরা দেয়।

৫. খরগোশ ও কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতা আবারও আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু এবারও তাদের দৌড়ের পথের মধ্যে আছে একটা বড় খাল। খরগোশ বলল, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া প্রতিযোগিতা হয় না। প্রতিযোগিতার মাঠ সমান হতে হবে। মাঠ সমান চাই, মাঠ সমান চাই। কচ্ছপ বলল, মাঠ সমানই আছে। তুমি সাঁতার পারো না, এটা তো আমার দোষ না। খরগোশ বলল, এমনটা হলে আমি প্রতিযোগিতা হতে দেব না। আমি আমার নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। কচ্ছপ বলল, ঠিক আছে। খরগোশ অংশ না নিলেও চলবে। আমি মুরগিকে মাঠে নামাব। নির্দিষ্ট দিনে খরগোশ ব্যাপক চেঁচামেচি করল। তা সত্ত্বেও কচ্ছপ আর মুরগির রেস শুরু হয়ে গেল। মুরগি খালের পাড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। প্রতিযোগিতায় জয়ী হলো কচ্ছপ।

৬. আবার প্রতিযোগিতা হবে। এবার কচ্ছপ বলল, খরগোশ, তুমি এসো, আমার সঙ্গে রেস খেলো। খালে তোমার জন্য প্রস্তুত থাকবে হাঁস। তুমি হাঁসের পিঠে চড়ে খাল পার হবে। খরগোশ রাজি হলো। শুরু হলো দৌড়। খালের পাড়ে পৌঁছে খরগোশ দেখল, কোথাও কোনো হাঁস নেই। সে ভীষণ রেগে গেল। নিজের হাত-পা নিজে কামড়াতে লাগল। কয়েক ঘণ্টা পর কচ্ছপ এসে পানিতে নেমে দ্রুতই খাল পার হয়ে গেল। বনের পশুরা আহত খরগোশের হাতে-পায়ে লতাপাতার ওষুধ লাগাতে লাগল দয়াপরবশ হয়ে।

৭. সামনে আবারও হতে যাচ্ছে দৌড় প্রতিযোগিতা। কচ্ছপ বলল, দৌড়ে প্রতিযোগিতা খরগোশের জন্য উন্মুক্ত। সে আসুক। অংশ নিক।

খরগোশ বলল, রেস হবে। তবে খাল থাকতে পারবে না। দেখা যাবে, কে ভালো দৌড়ায়, খরগোশ নাকি কচ্ছপ।

কচ্ছপ বলল, আমি সাঁতার পারি, এটা তো আমার দোষ হতে পারে না।

খরগোশ বলল, তুমি কেন প্রতিযোগিতার নিয়ম পাল্টেছ? তুমি একটা তস্কর।

কচ্ছপ বলল, আমাকে যে তস্কর বলে, সে একটা দস্যু। তার দস্যুতায় বনে একটাও গাজর আস্ত থাকছে না।

তুই তস্কর।

তুই দস্যু।

তুই ব্যর্থ। নাচতে জানিস না বলে তোর উঠান বাঁকা।

তুই অনিয়মকারী। তুই দুই নম্বর, আড়াই নম্বর, পৌনে তিন নম্বর।

এভাবে ঝগড়াঝাঁটি করতে করতে তারা বনের পশুপাখির কান ঝালাপালা করে ফেলল। অতিষ্ঠ পশুপাখি বিচার দিল বনের রাজা সিংহকে। সিংহরাজ মধ্যস্থতার দায়িত্ব দিলেন শিয়ালকে।

শিয়াল বলল, হুক্কা হুয়া। কী সমস্যা।

খরগোশ বলল, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। দৌড়ের খেলার নিয়ম কেন সে একা একা পাল্টাবে?

কচ্ছপ বলল, নিয়ম তো নিয়মই। এটা তো আমি পাল্টাইনি…

খরগোশ বাছা, এদিকটায় এসো। শিয়াল মিষ্টি হাসি হেসে বলল। কচ্ছপ বলল, ওকে কেন ডাকছেন? শিয়াল মারল এক চাপড়, অমনি কচ্ছপ তার খোলের মধ্যে লুকিয়ে ফেলল মাথা আর হাত–পা।

‘তোর হাড়টা চিবুতে কেমন লাগবে’ বলে শিয়াল খরগোশের দিকে বাড়াল তার একটা থাবা। খরগোশ দৌড়াতে শুরু করল। পিছু নিল শিয়াল। এবার সেই অঙ্কের পালা। একটা শিয়াল মিনিটে ৩০টা পদক্ষেপ দেয়, প্রতি পদক্ষেপে পাড়ি দেয় ৫ ফুট। একটা খরগোশ মিনিটে ৬০টা পদক্ষেপ ফেলে, প্রতি পদক্ষেপে যায় আড়াই ফুট। কতক্ষণ পরে শিয়াল খরগোশকে ধরতে পারবে?

এদিকে কচ্ছপও দৌড়াতে শুরু করল। তাড়াতাড়ি যেতে হবে খালে। তারপর ভেসে ভেসে যেতে হবে খালের ওপারে।

উপদেশ: ঝগড়াঝাঁটির পরিণাম কখনো ভালো হয় না।

  • আনিসুল হক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.