কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে চর্মরোগ বাড়ছে

0
178
কক্সবাজার জেলার মানচিত্র

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ আশ্রয়শিবিরে বসবাসকারী শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ রোহিঙ্গা চর্মরোগে (স্ক্যাবিস) আক্রান্ত। কিছু কিছু আশ্রয়শিবিরে আক্রান্ত ৭০ শতাংশেরও বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।

স্ক্যাবিসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স বা এমএসএফ (সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল)। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় পাঠানো এমএসএফের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে খুব দ্রুত ও বিস্তৃত পদক্ষেপ নিতে হবে। আশ্রয়শিবিরে বিদ্যমান পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থার উন্নয়নকেও এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বালুখালী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা আজমত উল্লাহ বলেন, গত ডিসেম্বরে তাঁর চার বছরের ছেলের পুরো শরীরে ফুসকুড়ি দেখা যায়। প্রথমবার সুস্থ হওয়ার পর তিনি আবারও সংক্রমিত হন। বাকি দুই ছেলেও আক্রান্ত হয়।

খোসপাঁচড়ার ৪০ শতাংশ হার একটি সতর্কবার্তা জানিয়ে বাংলাদেশে এমএসএফের মিশনপ্রধান কার্স্টেন নোকো বলেন, ‘এটি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্তমান প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ওষুধের ব্যাপক বিতরণ সম্পর্কে বারবার আলোচনা করা হয়েছে। তবে এ রোগের প্রাদুর্ভাবের মূল কারণ—জনবহুল ক্যাম্পের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে শুধু ওষুধ দিয়ে পুনরায় এ রোগের সংক্রমণ রোধ করা যাবে না।’

গত বছর এমএসএফ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের পানি ও স্যানিটেশন পরিস্থিতি নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। এতে দেখা যায়, ক্যাম্পে যথাযথ স্যানিটেশন এবং পানির অভাব আছে। গত দুই বছরে পানি ও স্যানিটেশন কাঠামোর উন্নয়ন হলেও এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। আগের তুলনায় ব্যবহারযোগ্য শৌচাগার কমেছে। কিছু কিছু এলাকায় প্রতিদিন মাত্র দুই ঘণ্টা পানি পাওয়া যায়। গত মাসে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাবানের রেশন প্রতি মাসে দুটি থেকে কমিয়ে একটি করা হয়েছে।

বাংলাদেশে এমএসএফের ডেপুটি মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর পঙ্কজ পাল বলেন, ‘অনেক সময় আমরা দিনে প্রায় ৭০০ রোগী দেখেছি। গত ফেব্রুয়ারি থেকে রোগীদের নিজ নিজ ক্যাম্পের কাছাকাছি থাকা স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে বলা হয়। এই মুহূর্তে স্ক্যাবিসের জন্য চিকিৎসা নিতে আসা সব রোগীকে আমরা স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারছি না। আমাদের সে সক্ষমতা নেই। এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করা হয়েছে।’

স্ক্যাবিসের চিকিৎসাপ্রক্রিয়াটি সহজ। তবে সময়মতো চিকিৎসাসেবা না পেলে এটি গুরুতর শারীরিক ও মানসিক প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণ চিকিৎসার মধ্যে আছে রোগীদের ত্বক, জামাকাপড় এবং ঘরে ওষুধ প্রয়োগ করে স্ক্যাবিসের পরজীবী নির্মূল করা। তবে এমএসএফের চিকিৎসকেরা সতর্ক করেন, এ রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে শুধু ওষুধ যথেষ্ট হবে না। প্রয়োজন প্রাদুর্ভাবের উৎস নির্মূল করা। কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে রোগের প্রাদুর্ভাব এমন একটি সময়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, যখন তাঁদের জন্য বরাদ্দ কমে যাচ্ছে।

জামতলী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা কিশোর আবু তাহের বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত জায়গা নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও বেশ কঠিন। আমরা একই বিছানা, জামাকাপড় এবং প্রায় সব জিনিস অন্যের সঙ্গে ভাগ করে ব্যবহার করি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.