কক্সবাজারে আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৮৭ হাজার মানুষ

0
212
শনিবার বিকেল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন মানুষ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’র গতি বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের উপকূলের সঙ্গে এর দূরত্ব কমছে। তাই ‘মোকা’র প্রভাব থেকে জানমাল রক্ষায় কক্সবাজার উপকূল এলাকার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন। শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ১ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, কক্সবাজার জেলায় ৬৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭০৩ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশা করি, রাতের মধ্যে সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসবেন।

কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ঘরগুলো সাগর তীরে। যেকোনো সময় ডুবে যেতে পারে। তাই প্রাণ বাঁচাতে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আগে থেকে চলে আসছি। আল্লাহ জানে এই ঘূর্ণিঝড়ের পরিণতি কী কয়।’

জহুরা বেগম নামে সাগর তীরের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার স্বামী বৃদ্ধ এবং অসুস্থ। তাই আগে থেকে চলে আসলাম। ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে তাকে নিয়ে কোথায় যাবো। সে তো চলাফেরাও করতে পারে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে বলা হচ্ছিল আজ সন্ধ্যা থেকে ঘূর্ণিঝড় শুরু হতে পারে, তাই সবকিছু নিয়ে প্রথমে ডিসি স্যারের কার্যালয়ে চলে যায়, পরে সেখান থেকে এখানে (প্রিপ্যারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে) গাড়ি দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে আমাদের।’

কক্সবাজার পৌরসভা থেকে পৌর প্রিপ্যারেটরি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রের দেখভালের দায়িত্বে থাকা নিরুপম শর্মা বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পৌর প্রিপ্যারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে কয়েক হাজার লোকজন আশ্রয়ের জন্য চলে এসেছেন। তাদেরকে পৌরসভার পক্ষ থেকে শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলার টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলাতে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। উপকূল ও দুর্গত এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অন্তত ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা প্রায় পাঁচ লাখ ছয় হাজার। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে।

দুর্যোগের প্রস্তুতির বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ৪৯০ মেট্রিক টন চাল, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির (সিপিপি) ৮ হাজার ৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবী, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রোভার স্কাউট সদস্য, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও অন্তত দেড় হাজার সদস্যকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কাজ করছে। উদ্ধার তৎপরতায় নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের রেসকিউ টিম, রেসকিউ বোট, মেডিকেল টিম ও কমান্ডো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু কক্সবাজারের দিকে আঘাত হানার কথা বলা হচ্ছে, সেহেতু প্রস্তুতিও আগেভাগে নিতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।’

এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মোবাইল নম্বর- ০১৮৭২৬১৫১৩২।

কক্সবাজার  আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান বলেন, রোববার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোকা আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এ সময় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৯০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে। সংকেত আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিনের দুই দিক থেকে যেহেতু খোলা রয়েছে এবং পানি চলাচলের সুবিধা আছে, সেহেতু বড় ধরনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওই অঞ্চলে পানি জমে থাকবে না। আবহাওয়া অফিস থেকে প্রতি মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’র সব আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি থানায় আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। দুর্যোগকালীন লোকজনকে সহায়তা, সহযোগিতা এবং তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কাজ করছে পুলিশ। কারণ লোকজনকে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিকতার পরিচয় দিতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.