কক্সবাজার শহরের হোটেলকক্ষে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিনকে (৪৫) হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মাদ্রাসাছাত্রকে (১৮) জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এরপর আজ বুধবার সকালে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে ওই মাদ্রাসাছাত্র হোটেল কক্ষে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং এর প্রতিশোধ নিতে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিনকে ছুরিকাঘাতে হত্যার দায় স্বীকার করেন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার রাতে কক্সবাজার থেকে টেকনাফে পালানোর সময় পুলিশ হোয়াইক্যং এলাকা থেকে ওই মাদ্রাসাছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। এরপর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই মাদ্রাসাছাত্র যৌন নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে সাইফ উদ্দিনকে হত্যার কথা জানান। গতকাল রাতে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে একই কথা বলেন তিনি। হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা জানতে অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই মাদ্রাসাছাত্রের বাড়ি কক্সবাজার শহরের একটি এলাকায়। তাঁর পূর্বপুরুষ মিয়ানমারের বাসিন্দা। দুই বছর আগে আশরাফুল কক্সবাজার শহরের একটি মাদ্রাসা থেকে কোরআনে হাফেজ হন। কয়েক মাস আগে নিহত সাইফ উদ্দিনের শ্যালক নয়নের মাধ্যমে সাইফের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। এরপর সাইফের মোটরসাইকেলে করে তাঁকে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখেন অনেকে। গত রোববার রাতে সাইফের সঙ্গে সানমুন হোটেলের ২০৮ নম্বর কক্ষে যান আশরাফুল।
পুলিশ জানায়, গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ সানমুন হোটেলের ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে সাইফ উদ্দিনের হাত বাঁধা রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে। বিকেলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। ঘটনার পর ওই মাদ্রাসাছাত্র আত্মগোপন করেন। সোমবার রাতে টেকনাফে পালানোর সময় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
নিহত সাইফ উদ্দিনের বাড়ি শহরের ঘোনাপাড়ায়। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফ উদ্দিন কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
যৌন নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছেন ওই মাদ্রাসাছাত্র—কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলামের দেওয়া এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে সাইফ উদ্দিনের পরিবার।
সাইফ উদ্দিনের বাবা আবুল বাশার গতকাল রাতে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর ছেলে অত্যন্ত ভদ্র ও সবার কাছে ভালো হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সানমুন হোটেলের কক্ষে চেতনানাশক কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে ছুরিকাঘাত করে সাইফকে হত্যা করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
নিহত সাইফের ছোট ভাই মহিউদ্দিন বলেন, ‘পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ডকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে আমাদের পরিবার ও আওয়ামী লীগকে মানুষের সামনে হেয় করা হয়েছে। ওই মাদ্রাসাছাত্রের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করছি। এসপির বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাই। আমার ভাইয়ের চরিত্রহরণের প্রতিবাদে আজ বুধবার বেলা তিনটায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পরিবারের বক্তব্য তুলে ধরা হবে।’