কক্সবাজার সৈকত বৈরী আবহাওয়ায়ও উৎসবের আমেজ, এক ঘণ্টায় ১২৭ প্রতিমা বিসর্জন

0
12
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। আজ বিকেলে

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে সকাল থেকে বৃষ্টি, উত্তাল সাগর, গর্জন তোলা ঢেউ—এসব উপেক্ষা করেই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আজ বৃহস্পতিবার প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে। বিকেল চারটার দিকে লাবণী পয়েন্টের বিজয়া মঞ্চসংলগ্ন এক বর্গকিলোমিটারজুড়ে প্রতিমা ঘিরে ভক্তদের আনন্দ-উল্লাস, সিঁদুরখেলা ও শেষ মুহূর্তের প্রার্থনা চলছিল। লাখো পর্যটকও যোগ দিয়েছিলেন এ উৎসবে।

বিকেল পাঁচটায় মন্ত্রপাঠের পর শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। মাত্র এক ঘণ্টায় একে একে ১২৭ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এ সময় ভক্তদের চোখে জল, আবার সাগরতটে ঢাকঢোল বাজিয়ে আনন্দ-উল্লাসও ছিল চোখে পড়ার মতো। দুপুরে প্রতিমা নিয়ে শহরের বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। লাবণী সৈকতে পৌঁছালে কানায় কানায় ভরে যায় সৈকত।

কক্সবাজার জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শঙ্কর পাল জানান, এ বছর জেলার ৩২১টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে সৈকতে ১২৭ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। বাকি প্রতিমা চকরিয়ার মাতামুহুরী নদী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফ সৈকতে বিসর্জন দেওয়া হয়।

বৈরী আবহাওয়া ও বিপুল মানুষের ভিড় সামলাতে সকাল থেকে সেনাবাহিনী, র‍্যাব, বিজিবি, পুলিশ, পর্যটন পুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী মোতায়েন ছিল। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতও মাঠে সক্রিয় ছিল। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে পুরো অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়।

প্রতিমা বিসর্জন উৎসব নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল। আজ দুপুরে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে  তল্লাশি চালান সেনা সদস্যরা
প্রতিমা বিসর্জন উৎসব নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল। আজ দুপুরে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে তল্লাশি চালান সেনা সদস্যরা

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে লাবণী পয়েন্টে তৈরি বিজয়া মঞ্চে শুরু হয় আলোচনা সভা। জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শঙ্কর পালের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান, পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দিন শাহীন, কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান, কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মো. মাহফুজউল্লাহ ফরিদ, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আবদুল্লাহ আল ফারুক প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন উখিয়া ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অজিত দাশ।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হওয়া সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান কাজল বলেন, লাখো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে কক্সবাজার সম্প্রীতির শহর।

সৈকতজুড়ে ছিল লাখো মানুষের উপস্থিতি। আজ বিকেলে
সৈকতজুড়ে ছিল লাখো মানুষের উপস্থিতি। আজ বিকেলে

প্রতিমা বিসর্জন দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা অভিভূত হয়েছেন। রাজশাহীর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘খোলা সৈকতে একে একে শতাধিক প্রতিমা বিসর্জনের দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি। চারপাশে লাখো মানুষ—তবু কোথাও বিশৃঙ্খলা নেই। সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি।’

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে আসা নতুন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘সাগরে প্রথমবার প্রতিমা বিসর্জন দেখলাম। বৃষ্টি আর ঢেউ উপেক্ষা করে লাখো মানুষের সমাগম অবাক করেছে।’

ঢাকার মিজানুর রহমানের মতে, ‘নিরাপত্তা নিয়ে শুরুতে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে বিসর্জন শেষ হতে দেখে খুব ভালো লাগছে। সম্প্রীতির এমন দৃষ্টান্ত পুরো দেশের জন্য অনন্য।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.