আওয়ামী ওলামা লীগের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ আবারও প্রকাশ্যে এসেছে। সংগঠনটির একাংশের নেতারা অভিযোগ করেছেন, রাতের আঁধারে সংগঠনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটিতে সহসভাপতির পদ পাওয়া মুফতি মাসুম বিল্লাহ আজ শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘রাতের আঁধারে ঘোষিত ওলামা লীগের আংশিক কমিটিকে জামায়াত ও বিএনপির খেলাঘর বানানো হয়েছে।’
১৫ জুন ওলামা লীগের একটি আংশিক কমিটি ফেসবুকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এই অভিযোগ তুলে সংগঠনটির একটি অংশের নেতা মুফতি মাসুম বিল্লাহ আজ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই কমিটি নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন।
আওয়ামী ওলামা লীগ তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা চেয়ে আসছিল। তবে সংগঠনটি বিভিন্ন সময় নারী নীতি ও শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এমনকি সংগঠনটির পক্ষ থেকে পয়লা বৈশাখকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল। এ ধরনের বিভিন্ন ঘটনা আওয়ামী লীগকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। এমনকি ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ বিবৃতি দিয়ে ওলামা লীগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকার কথা বলেছিল।
তবে সেই পরিস্থিতি হঠাৎই পাল্টে গেছে। ওলামা লীগের বিষয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সংগঠনটির সম্মেলনেও অংশ নেন। গত ২৫ মে ঢাকায় ওলামা লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি তাঁর বক্তব্যে ওলামা লীগকে দলাদলি, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কোনো কর্মকাণ্ডে না জড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছিলেন। এখন আবার ওলামা লীগের দলাদলি বা নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ প্রকাশ্যে এল।
ওলামা লীগের একাংশের নেতা মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনের আরেক অংশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ১৫ জুন দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওলামা লীগের আংশিক কমিটি করে তা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল হকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন ওলামা লীগের আরেক অংশের নেতা মুফতি মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেন, নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক যাকে করা হয়েছে, সম্প্রতি তাঁর আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এরপরও তাঁকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুফতি মাসুম বিল্লাহ।
ওলামা লীগের আরেক অংশের এই নেতা দাবি করেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্য থেকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি চার্জ কমিটি গঠন করে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে যাঁরা বৃষ্টিতে ভিজে রোদে শুকিয়ে মাননীয় নেত্রীর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ করেছেন বা করছেন, তাঁদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করাসহ ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একটি সুন্দর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত কমিটিতে পদ পাওয়া আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন ঘোষিত কমিটির উপদেষ্টা কাজী মাওলানা আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সহসভাপতি মাওলানা সুলাইমান, সহসভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমান, সহসভাপতি মাওলানা আইনুল হক ফারুকী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার হোসেন জুয়েল, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মুফতি হাসানুজ্জামান চিশতী, দপ্তর সম্পাদক হাবিবুল্লাহ রূপগঞ্জী, সদস্য আক্তার হোসেন ফারুকী প্রমুখ।
তবে ওলামা লীগের এই অংশের নেতারা তাঁদের অপর পক্ষ, যাঁদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছেন, তাঁদের দিক থেকে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।