ওয়াকিটকির ব্যাটারিতে ছিল ‘পিইটিএন’ বিস্ফোরক, পরিকল্পনায় ইসরায়েলের গোপন গোয়েন্দা দল

0
55
লেবাননের বালবেক শহরে গতকাল বুধবার বিস্ফোরিত হওয়া একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস,ছবি: এএফপি

লেবাননে গত বুধবার বিস্ফোরিত হওয়া হিজবুল্লাহর ওয়াকিটকির ব্যাটারিতে ছিল ‘পিইটিএন’ নামের এক ধরনের উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক। এর আগের দিন মঙ্গলবার সশস্ত্র গোষ্ঠীটির ব্যবহার করা পেজার নামের এক ধরনের যোগাযোগের ডিভাইসে বিস্ফোরণ হয়। ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দাদের গোপন দল ইউনিট–৮২০০ এই দুই বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিল বলে জানা গেছে।

ওয়াকিটকির ব্যাটারিতে পিইটিএন থাকার বিষয়টি আজ শুক্রবার রয়টার্সকে জানিয়েছে লেবাননের একটি সূত্র। ওই ওয়াকিটকির যন্ত্রাংশ সম্পর্কে জানাশোনা আছে তার। এর আগে সূত্রের বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, হিজবুল্লাহর পেজারে মাত্র তিন গ্রাম বিস্ফোরক রাখা ছিল। এই পেজার সঙ্গে নিয়েই দিনের পর দিন ঘুরছিলেন গোষ্ঠীটির সদস্যরা।

গত মঙ্গলবার রাজধানী বৈরুতের উপকণ্ঠ, পূর্বাঞ্চলীয় বেকা উপত্যকা ও দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর হাজার হাজার পেজারে বিস্ফোরণ হয়। তাতে তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠান ‘গোল্ড অ্যাপোলোর’ লোগো ছিল। পরদিন শত শত ওয়াকিটকিসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই দুই হামলায় অন্তত দুই শিশুসহ ৩৭ জন নিহত হন। আহত হন তিন হাজারের বেশি মানুষ।

জাপানি প্রতিষ্ঠান আইকমের এই ওয়াকিটকিগুলো বিস্ফোরিত হয়েছে বুধবার
জাপানি প্রতিষ্ঠান আইকমের এই ওয়াকিটকিগুলো বিস্ফোরিত হয়েছে বুধবার, ছবি: এএফপি

এসব হামলার পেছনে ইসরায়েলের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে হিজবুল্লাহ ও লেবানন সরকার। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। চলতি সপ্তাহেই পশ্চিমা একটি নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর গোপন গোয়েন্দা দল ‘ইউনিট–৮২০০’ এই হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত।

টের পায়নি হিজবুল্লাহ

পেজারে বিস্ফোরক থাকার বিষয়টি বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগেও টের পায়নি হিজবুল্লাহ। গোল্ড অ্যাপোলোর লোগো–সংবলিত এই ডিভাইস বিস্ফোরণের আগমুহূর্তেও ব্যবহার করছিল তারা। নিরাপত্তাসংক্রান্ত দুটি সূত্র জানিয়েছে, বিস্ফোরণের আগের দিন সোমবার নতুন একটি পেজার হিজবুল্লাহর এক সদস্যকে দেওয়া হয়েছিল। সেটি মোড়কের ভেতরে থাকা অবস্থাতেই পরদিন বিস্ফোরিত হয়।

সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানতে পেরেছে, ২০২২ সাল থেকে হিজবুল্লাহর হাতে আসা পেজারগুলো ব্যবহারের আগে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখা হয়। আমদানির পর বিমানবন্দর দিয়ে লেবাননে প্রবেশের সময়ও সেগুলো খতিয়ে দেখা হয়। তবে বিস্ফোরিত হওয়া পেজারগুলোর প্রতিটিতে মাত্র তিন গ্রাম করে বিস্ফোরক ছিল। তাই স্ক্যানার বা অন্য কোনো যন্ত্রের মাধ্যমে তা শনাক্ত করাটা খুবই কঠিন।

বিস্ফোরিত হওয়া পেজারগুলোতে গোল্ড অ্যাপোলোর লোগো থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সেগুলো তাদের তৈরি নয়। প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্যমতে, এই পেজারগুলো ইউরোপে লাইসেন্স থাকা একটি প্রতিষ্ঠানে তৈরি করা। ওই প্রতিষ্ঠানটিকে গোল্ড অ্যাপোলোর নাম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে সেগুলো আদতেই কোথায় তৈরি বা কখন সেগুলোতে বিস্ফোরক স্থাপন করা হয়েছিল, তা যাচাই করে দেখতে পারেনি রয়টার্স।

বিস্ফোরণের পর একটি পেজার
বিস্ফোরণের পর একটি পেজার, ছবি: রয়টার্স

গত বছরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন নেতা নিহত হন। এরপর থেকে নেতাদের মুঠোফোনে আড়ি পাতা থামাতে পেজার ব্যবহারের দিকে ঝোঁকে গোষ্ঠীটি। তারই অংশ হিসেবে চলতি বছরে পাঁচ হাজার পেজারের একটি চালান আমদানি করা হয়েছিল।

এর আগেও নাকি হিজবুল্লাহর ব্যবহার করা নানা ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে হামলা চালাতে চেয়েছিল ইসরায়েল। একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বিদেশ থেকে হিজবুল্লাহর আমদানি করা ল্যান্ডলাইন টেলিফোন থেকে শুরু করে বাতাস চলাচলের যন্ত্র—এমন অনেক জিনিস ব্যবহার করে হামলার চেষ্টা হয়েছিল। সেসব চেষ্টা সফল হয়নি। তবে পেজারে বোমা থাকার বিষয়টি টের পায়নি হিজবুল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.