মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় নকল না করলেও হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়া নামে এক শিক্ষার্থীর ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ নিয়ে চলছে তোলপাড়। একদিকে পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত যে পরিদর্শকের দিকে সন্দেহের তীর, ঘটনার পর থেকে তিনি লাপাত্তা, আরেকদিকে অভিযোগ জানাতে গিয়ে যে চিকিৎসকের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, তাকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। সব মিলিয়ে সঠিক বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীর অভিবাবকরা।
ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়ার চিঠির প্রেক্ষিতে জানা যায়, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২৩ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার পাশের এক পরীক্ষার্থী ডিভাইস ব্যবহার করে নকল করছিলেন। এক ঘণ্টা পরীক্ষার ৪০ মিনিট পর দায়িত্বরত এক নারী পরিদর্শক ডিভাইস ব্যবহার করা শিক্ষার্থীকে ধরে ফেলেন।
হুমাইরার দাবি, এ সময় নকল করা শিক্ষার্থীর মতো সন্দেহবশত তারও ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলেন ওই নারী পরিদর্শক। পরে, হুমাইরার দাবির মুখে যাচাই করে তার উত্তরপত্র সঠিক ছিল বলে প্রমাণ হয়। পরে দুঃখ প্রকাশ করে তাকে নতুন একটি ওএমআর শিট দেওয়া হয়। তবে তখন পরীক্ষার নির্ধারিত সময় ছিল শেষ পর্যায়ে। এতে শেষ হয়ে যায় হুমাইরার সব স্বপ্ন।
ঘটনাটি ঘটেছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে। ঘটনার পর শুরুতে শেরেবাংলা কেন্দ্র এবং পরে মেডিকেল কলেজে এসেও কোনো সুরাহা পায়নি হুমাইরার পরিবার। শেষমেষ ১১ ফেব্রুয়ারি ফলাফল ঘোষণার দিন স্বাস্থ্য অধিপ্তরে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেই অভিযোগ জানান হুমাইরা ও তার পরিবার। মন্ত্রী চলে যাবার পর ঘটে মারধরের ঘটনা।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ওই কক্ষে পরিদর্শকের দায়িত্বে ছিলেন তিনজন চিকিৎসক। যাদের মধ্যে দুজন নারী, অপরজন পুরুষ। দুই নারী চিকিৎসকের একজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের। হুমাইরা বলছেন, যিনি তার ওএমআর ছিঁড়েছেন তিনি বাঙালি। নথি বলছে, ডা. নাফিসা ইসলামের সঙ্গেই হুমাইরার ওই কাণ্ড ঘটে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে লাপাত্তা নাফিসা ইসলাম। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের কোথাও পাওয়া যায়নি তাকে। বন্ধ পাওয়া গেছে পরিদর্শন নথিতে দেওয়া তার মোবাইল নম্বরটিও। হাসপাতালে থাকা তার সহকর্মীরাও অবস্থান জানাতে পারেননি। ফলে নাফিসা ইসলামের কাছ থেকে ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়নি।
পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের উপাধাক্ষ্য ডা. সোহেল মাহমুদ অবশ্য দাবি করছেন, অভিযোগকারী যা বলছে তা সত্য নয়। সেদিন এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ আসার পর হল সুপারদের আমি ডাকাই। তাদের তিনজনের সাক্ষাৎকার নেই। তারা বলে, এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি।’
এমন অবস্থায় অভিযোগকারী সেই শিক্ষার্থী এবং তার পরিবার অভিযোগের ইতিবাচক ফল নিয়ে পড়েছেন সংশয়ে। তারা বলছেন, কেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এমন অভিযোগ জানানো হয়েছে ‘সেই অপরাধে’ যিনি মারধরের নেতৃত্বে ছিলেন তাকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তদন্ত কমিটির প্রধান করেছে।
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে কমিটির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মেলেনি। সাংবাদিকদের সামনে পড়লেও তাদের এড়িয়ে যান কমিটির চার সদস্য।
সব শুনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলছেন হুমাইরার সঙ্গে কোনো অন্যায় ঘটবে না। তিনি বলেন, আমি খুবই দুঃখিত। একটা পরীক্ষার্থী কোনওভাবে কারো গাফলতিতে বঞ্চিত হোক, সেটা কোনোভাবেই কাম্য না। আমি দেখবো মেয়েটির সঙ্গে যেন কোনও অন্যায় না হয়।
হুমাইরার পরিবারের দাবি, পরিদর্শক ডা. নাফিসার সঙ্গে হুমাইরার সাক্ষাৎ করানো হোক এবং বাকি পরীক্ষার্থীদের কাছেও শোনা হোক সেদিন আসলে কী ঘটেছিল।