এশিয়ার কোন ১০ দেশে কম শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প

0
27
কম্বোডিয়ার একটি বন্দর

যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কহারই নির্ধারণ করে—রপ্তানি কতটা লাভজনক হবে, কিংবা আদৌ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে কি না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই আমদানি শুল্ক আরোপের পক্ষে কথা বলে থাকেন। তাঁর মতে, শুল্ক বসালে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ বেশি করে নিজ দেশে তৈরি পণ্য কিনবে।

গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। গতকাল বৃহস্পতিবার এক নির্বাহী আদেশে চূড়ান্ত শুল্কহার ঘোষণা করেন তিনি। এতে দেখা গেছে, আলোচনার মাধ্যমে অনেক দেশই উচ্চ শুল্কের হাত থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়েছে। এশিয়ার যে ১০টি দেশে ট্রাম্প সবচেয়ে কম শুল্ক বসিয়েছেন, এমন ১০টি দেশ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

আফগানিস্তান

আফগানিস্তানের কাবুল শহর
আফগানিস্তানের কাবুল শহর, ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

আফগানিস্তানের পণ্য আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত শুল্কহারের তুলনায় এ হার কিছুটা বেশি। তখন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছিল। দেশটির সংবাদ সংস্থা খামা প্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আফগানিস্তানের বাণিজ্য ৭৬ শতাংশ কমে গেছে।

জাপান

জাপানের টোকিওর একটি বন্দর এলাকা
জাপানের টোকিওর একটি বন্দর এলাকা, ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে পরিচিত। গতকাল ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে দেশটির ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। গত ২ এপ্রিল ঘোষিত শুল্কহারের তুলনায় এ হার অনেকটাই কম। গত ২৩ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করে জাপান।

এই চুক্তির মধ্য দিয়ে জাপানি রপ্তানিপণ্যের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। বিশেষ করে জাপানের গুরুত্বপূর্ণ গাড়িশিল্পের ওপর আরোপিত শুল্কও কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে জাপানের জন্য বড় ধরনের আর্থিক স্বস্তি এসেছে। কারণ, দেশটির রপ্তানির বড় একটি অংশ এ গাড়িশিল্প।

দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বন্দর এলাকা
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বন্দর এলাকাছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আরেক গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। জাপানের মতোই দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি ও সেমিকন্ডাক্টর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত ২৫ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। জুলাইয়ে তারাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে শুল্কহার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে দেশটি।

ইসরায়েল

ইসরায়েলের হাইফা বন্দর
ইসরায়েলের হাইফা বন্দর, ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

ইসরায়েলের ওপরও ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত এপ্রিলে প্রস্তাবিত শুল্কহারের তুলনায় এবার কিছুটা কমানো হয়েছে। ২ এপ্রিল ইসরায়েলের ওপর ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছিল।

ইসরায়েলের সরকারি সংবাদমাধ্যম কানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে দেশটি ৫ হাজার ২০০ কোটি শেকেল (প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার) মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। আর আমদানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২০০ কোটি শেকেল (প্রায় ৮০৬ কোটি ডলার)।

জর্ডান

গতকাল জর্ডানের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত এপ্রিলে দেশটির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে চূড়ান্ত ঘোষণায় তা ৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।

২০২৪ সালে জর্ডান যুক্তরাষ্ট্রে ৩১১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানির মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ৭৫ শতাংশ। তবে এই রপ্তানি জর্ডানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জর্ডানের মোট রপ্তানির ২৫ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে হয়।

কম্বোডিয়া

কম্বোডিয়ার একটি বন্দর
কম্বোডিয়ার একটি বন্দরছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

কম্বোডিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে তা গত এপ্রিলে প্রস্তাবিত শুল্কহারের চেয়ে অনেকটাই কম। তখন দেশটির ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তারাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে কম্বোডিয়া তাদের সরকারি বিমান সংস্থা ‘এয়ার কম্বোডিয়া’–এর জন্য ১০টি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ উড়োজাহাজ কিনবে।

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার একটি বন্দর
মালয়েশিয়ার একটি বন্দরছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। তবে শেষ পর্যন্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে সেই হার কমিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে দেশটি।

মালয়েশিয়া বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা বাণিজ্য চুক্তিতে দেশের সার্বভৌমত্বের কোনো ক্ষতি হয়নি। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, আলোচনা চলাকালে তারা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ‘লাল রেখা’ বজায় রেখেছে। পুরো আলোচনা ছিল গভীর ও পরিকল্পিত।

ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশিয়ার একটি বন্দর
ইন্দোনেশিয়ার একটি বন্দরছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর আগে ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির ওপর ৩২ শতাংশ শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি করার মধ্য দিয়ে ইন্দোনেশিয়া শুল্ক কমিয়ে আনতে পেরেছে।

চুক্তি অনুযায়ী, শুল্ক ছাড়ের বিনিময়ে ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫০টি বোয়িং বিমান, ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের জ্বালানিপণ্য এবং ৪৫০ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য কিনবে।

পাকিস্তান

পাকিস্তানের করাচি বন্দর
পাকিস্তানের করাচি বন্দরছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানে ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ২ এপ্রিল দেশটির ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কম শুল্ক আরোপের কারণে পাকিস্তানের বস্ত্রশিল্প খাত সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের মোট রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশই এই খাত থেকে হয়ে থাকে। আর এই রপ্তানির একটা বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্রে যায়। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। এমনকি পাকিস্তান গত জুনে ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নও দেয়।

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ডের একটি বন্দর
থাইল্যান্ডের একটি বন্দরছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

এশিয়ার আরেক দেশ থাইল্যান্ডের ওপরও ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর আগে দেশটির ওপর ৩৬ শতাংশ শুল্ক বসানোর হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সে তুলনায় এবার শুল্কের পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে।

থাইল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রে অনেক পণ্য রপ্তানি করে। গত বছর দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে ৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা তাদের মোট রপ্তানির প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ।

সূত্র: বিবিসি, সিএনএন, জর্ডান টাইমস, খামা প্রেস, সিএনবিসি, রয়টার্স

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.