ঈদের ছুটি কবে শুরু হবে, ২৯ রমজান (৯ এপ্রিল) সরকারি অফিস খোলা নাকি বন্ধ থাকবে; এ নিয়ে কিছুদিন ধরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কারণ, ৯ এপ্রিল থেকে ঈদের ছুটি নিশ্চিত হলে অনেকে তার আগের দিন ছুটির আবেদন করবেন। তাতে সরকারি চাকরিজীবীদের ছুটি দাঁড়াবে কার্যত ১০ দিন।
রোববার আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২৯ রমজান, অর্থাৎ ৯ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করার সুপারিশ করেছে। যদিও এর আগে ৩০ রোজা হবে ধরে নিয়েই সরকার ২৯ রমজান অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তার পর থেকে ছুটি নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে উসখুস শুরু হয়। কারণ, ৭ এপ্রিল পবিত্র শবে কদরের ছুটি। তার আগের দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ঈদের ছুটি ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। পরের দিন ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের ছুটি। এ অবস্থায় ৯ এপ্রিল সরকার ছুটি ঘোষণা করে কি না, এখন সেদিকে দৃষ্টি সরকারি কর্মচারীদের। এরপর ৮ এপ্রিল ছুটি নিলেই টানা ১০ দিনের অবকাশ পাবেন তাঁরা।
তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয়ক ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খান গত শনিবার বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক এখন পর্যন্ত ২৯ রমজান অফিস খোলা থাকবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এবার ৩০ রোজা হবে; এটা ধরে নিয়ে ছুটি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তিনি এ–ও বলেন, যেহেতু এই সপ্তাহ অফিস খোলা, সরকার চাইলে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় ঈদুল ফিতর। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ কারণে ২৯ রোজা হবে ধরে নিয়ে ঈদের ছুটি ঠিক করা হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক হবে ২৯ রমজানে।
কিন্তু এবার ইসলামিক ফাউন্ডেশন আগেই কীভাবে নিশ্চিত হলো ৩০ রোজা হবে, এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব হামিদ জমাদ্দার ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক বশিরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।
৯ এপ্রিল ছুটির সুপারিশ
রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা থেকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৯ এপ্রিলও ছুটি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। সভা শেষে কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ কথা জানান। তিনি বলেন, মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারেন, সে জন্য এ সুপারিশ করা হচ্ছে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক আছে। সেই বৈঠকে এ কমিটির সুপারিশ যাবে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটি (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) আছে ১০ থেকে ১২ এপ্রিল।
তবে সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২৮ রমজানের পর সরকারি অফিস ঢিলেঢালা শুরু হয়। খুব একটা জরুরি কাজ থাকে না। তেমন চাপও থাকে না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে শিথিলতা কাজ করে।
এরই মধ্যে অনেকে টানা ছুটি কীভাবে এবং কোথায় কাটানো যায়, তা নিয়ে হিসাব–নিকাশ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। কোনো কোনো কর্মকর্তা জানান, ৯ এপ্রিল ছুটি না হলে ৮ ও ৯ তারিখ ছুটি নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন অনেকে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাঝখানে ছুটি না নিয়ে তিনি ১৪ এপ্রিলের পর ছুটি নেবেন। সে ক্ষেত্রে তিনি অফিস শুরু করতে পারেন পরের সপ্তাহ, অর্থাৎ ২১ এপ্রিল থেকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ঈদের ছুটি আনন্দময় ও নির্ঝঞ্ঝাট করতে ছুটি পাঁচ দিন করতে অনেক দিন ধরে আলোচনা চলছে। সেটা বাস্তবায়িত না হলেও এবার সাপ্তাহিক ছুটি ও দিবসের কারণে লম্বা ছুটি পাওয়া গেল।