সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে দেশেই বাস তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি)। এতে যেমন আমদানি-নির্ভরতা কমবে তেমনই সময় ও ব্যয় সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের বাইরে থেকে কেবল চেসিস (বাসের কাঠামো) কিনে এনে নিজস্ব জনবল ও দক্ষতায় সম্পূর্ণ বাস দেশেই তৈরি করা হবে। এতে একটি বাস তৈরিতে খরচ হবে প্রায় ৯০ লাখ টাকা এবং সময় লাগবে দেড় মাসের মতো।
অন্যদিকে, বিদেশ থেকে একটি দ্বিতল পূর্ণাঙ্গ বাস আমদানিতে ব্যয় হয় প্রায় ১ কোটি টাকার বেশি। অপেক্ষা করতে হয় তিন থেকে পাঁচ বছর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারত থেকে আমদানি করা একটি চেসিসের দাম প্রায় ৪০ লাখ টাকা ওপরে। এছাড়া জাপানের হিনো কোম্পানির মাঝারি ক্ষমতাসম্পন্ন চেচিসের দাম ৩৫ থেকে ৪৫ লাখ টাকা।
বিআরটিসির কারিগরি ও অপারেশন শাখার পরিচালক কর্নেল মো. মোবারক হোসেন মজুমদার বলেন, বর্তমানে বিদেশ থেকে বাস আমদানি করতে গেলে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে। এতে সময় ও অর্থ বেশি লাগে। তাই দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেস্ব কারখানায় বাস তৈরির পরিকল্পনা করেছি। বিআরটিসির লভ্যাংশের টাকা থেকে এসব বাস নির্মাণ করা হবে।
প্রথমদিকে ১০টি বাস নির্মাণ করতে চাইলেও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে আপাতত একটি বা দুটি বাস তৈরি করতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইতোমধ্যে ২০১২ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া গাজীপুরের সমন্বিত কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানা পুনরায় চালু করা হয়েছে। পুরোনো, নষ্ট ও অকেজো যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে নতুন সরঞ্জাম যুক্ত করা হয়েছে। এতে কারখানার সক্ষমতা বহুগুণ বেড়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া, ঢাকার তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানা আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল বলেন, বিআরটিসি শুধু চেচিস কিনবে। পরে তা নিজস্ব কারখানায় নিজেস্ব লোকবলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ বাসের রূপ দেওয়া হবে। দু-তিন মাসের মধ্যেই বিআরটিসির বহরে নিজেদের বানানো গাড়ি চলবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, বিআরটিসির নিজস্ব ডিপো আছে, টেকনিশিয়ান আছে, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও ওয়ার্কশপও আছে। বিআরটিসি নিজস্ব প্রযুক্তিতে বাস নির্মাণ করলে তাতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা যেমন বাঁচবে, তেমনি নিজস্ব সক্ষমতার কথাও আমরা বহির্বিশ্বকে জানান দিতে পারব। বিআরটিসির দেখাদেখি আরও অনেক বেসরকারি উদ্যোক্তা দেশে বাস তৈরি করতে এগিয়ে আসবে।
বর্তমানে বিআরটিসির যাত্রীবাহী বাস রয়েছে ১ হাজার ১৯৪টি। এসব বাস ভারত, চীন, জাপান, সুইডেন ও কোরিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে। নতুন করে ভারত থেকে ১০০টি বিদ্যুৎ-চালিত বাস ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সিএনজি চালিত ৩৫০টি বাস কেনার প্রক্রিয়া চলছে।
বিআরটিসির সূত্রমতে, বর্তমানে ৩০ সিটের বাসগুলো থেকে মাসে গড়ে ৮ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। প্রতিবছর আয় দাঁড়ায় গড়ে মোট ৯৫ লাখ। এবং এসব বাসে বার্ষিক খরচ প্রায় ৭০ লাখ টাকা। এতে প্রতিবছর বিআরটিসির গড়ে ২৫ লাখ টাকার ওপর আয় থাকে।