এবার দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহে সংকট

0
170
বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্র

দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের মধ্যে এখন ৬০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করছে শেভরন। দেশের তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন করে প্রতিদিন এ গ্যাস সরবরাহ করছে তারা। ১৯৯৫ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশে গ্যাস উৎপাদন শুরু করে শেভরন। গত সেপ্টেম্বর থেকে তাদের বিল বকেয়া রাখা শুরু হয়। গত মাস (ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত বকেয়া জমেছে ১৭ কোটি ডলার (প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা)।

পেট্রোবাংলার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, প্রতি মাসে শেভরনকে প্রায় পাঁচ কোটি ডলার বিল পরিশোধ করতে হয়। এক বছর ধরেই দেশে ডলার-সংকট। তাই পরিচালন খরচ মেটাতে মাসে অন্তত আড়াই কোটি ডলার নিয়মিত পরিশোধের কথা বলেছে শেভরন। কিন্তু ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এক কোটি বা দেড় কোটি ডলার করে পরিশোধ করা হচ্ছে। এতে প্রতি মাসে বকেয়া বাড়ছে। সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ১ শতাংশ জরিমানা ও সাড়ে ৩ শতাংশ লাইবর (লন্ডনের আন্তব্যাংক সুদের হার)। বহুজাতিক কোম্পানি এ জরিমানা মওকুফ করবে না। বিল পরিশোধের পর জরিমানা হিসাব করে পেট্রোবাংলাকে জানাবে শেভরন।

দেশে এখন দিনে গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুট। সর্বোচ্চ সরবরাহ করা হচ্ছে ২৯০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে আসে দিনে সর্বোচ্চ ২১৭ কোটি ঘনফুট। বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার মিলে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে শেভরন দিয়েছে ১৩২ কোটি ঘনফুট। দেশের গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে শেভরনের ভূমিকা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই পেট্রোবাংলা ডলার জোগাড় করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। বিল বকেয়ার জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ না করতেও শেভরনের সঙ্গে সমঝোতা করছে।

সূত্র বলছে, বকেয়া বিলের জন্য এখনো গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার কথা বলেনি শেভরন। কিন্তু উৎপাদন বাড়াতে গ্যাসক্ষেত্রে নিয়মিত বিভিন্ন উন্নয়নকাজ করছে এই কোম্পানি। এখনো বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের চার নম্বর কূপে তাদের কাজ চলছে। বিল বকেয়া বাড়তে থাকলে এসব কাজ থেমে যেতে পারে। এতেও গ্যাসের উৎপাদনে প্রভাব পড়তে পারে।

তবে শেভরন বাংলাদেশের মুখপাত্র শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিনিয়োগ করছে শেভরন। কোম্পানির নীতি অনুসারে বাণিজ্যিক কোনো বিষয়ে তাঁরা মন্তব্য করেন না।

গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে রেখে আগেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রস্তুতি নেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৬০০ কোটি ডলারের চাহিদা তৈরি হয়। এর মধ্যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম কমে এসেছে। ডলারের চাহিদা কমলেও তা সরবরাহ করতে পারছে না ব্যাংক।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ডলারের বিষয়টি পেট্রোবাংলার হাতে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সরবরাহের চেষ্টা করছে। শেভরন অনেক পুরোনো অংশীদার। তারা বকেয়ার জন্য গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করবে না। দ্রুতই তাদের গ্যাস বিল পরিশোধ করা হবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র বলছে, দুই বছরের করোনা মহামারির পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আমদানি খরচ বাড়ে, কমে যায় প্রবাসী আয়। এতে দেশে ডলার–সংকট দেখা দেয়। ডলারের জোগান নিশ্চিত করাই জ্বালানি খাতের মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডলারের অভাবে জ্বালানি তেল কেনা নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সর্বোচ্চ চাহিদার মৌসুমে জ্বালানি তেলের সরবরাহ বন্ধের হুমকি আসছে তেল সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বাংলাদেশ ব্যাংক কখনো পেট্রোবাংলাকে, কখনো বিপিসিকে কিছু কিছু করে ডলার দিচ্ছে। এতে নিয়মিত পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না কোনো সংস্থা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.