এবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ

0
256
বিদ্যুৎ বিভাগ

পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়েছে ডিসেম্বরে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবেদন করে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি। বিতরণ সংস্থাগুলো আবেদনে বলেছে, ২০২০ সালের পর খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়নি। এর মধ্যে বিভিন্ন খাতে খরচ বেড়েছে। এখন পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কারণে তাদের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। তাই পাইকারির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়াতে হবে। দাম বাড়ানোর প্রভাব নিয়ে তারা বলেছে, গ্রাহক ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে তাঁদের মাসের খরচ বাড়বে না। এ ছাড়া ধনী গ্রাহকেরাও বাড়তি বিল এড়াতে সাশ্রয়ী হবেন বলে তাদের ধারণা।

তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, মূল্যস্ফীতির প্রভাবে মানুষ কষ্টে আছে। বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে। এটা ভোক্তার জন্য অসহনীয় হবে। তাই দাম বাড়ানোর বিকল্প ভাবা উচিত।

বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) বজলুর রহমান শনিবার বলেন, আগামী মাসে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। তাই শুনানির পর বেশি সময় নেওয়া হবে না। এ মাসের মধ্যেই বিদ্যুতের দাম নিয়ে আদেশ ঘোষণা করা হবে।

এর আগে গত ২১ নভেম্বর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়েছিল বিইআরসি। নতুন এ দাম ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। দাম বাড়ানোর দুই দিনের মাথায় ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবেদন করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এরপর এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি পাঁচটি কোম্পানি আবেদন জমা দেয়। এরপর সবার আবেদন যাচাই-বাছাই করতে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে দেয় কমিশন।

দেশের সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। এরপর তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কিছুটা কম দামে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কাছে বিক্রি করে। ঘাটতি মেটাতে পিডিবি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয়। তবে বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো ভর্তুকি পায় না। তারা ভোক্তার কাছে ‘মুনাফা না, লোকসান না’ নীতিতে বিদ্যুৎ বিক্রি করার কথা থাকলেও, কেউ কেউ নিয়মিত মুনাফা করে।

বিতরণ কোম্পানির আবেদনে দেখা গেছে, সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) গত অর্থবছরে (২০২১-২২) ৫২৪ কোটি টাকা লোকসান করেছে। দাম বাড়ানো না হলে আগামী বছরে এটি আরও বেড়ে যাবে। গত অর্থবছরে ১৬৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। আগের বছর এটি ছিল ১০৭ কোটি টাকা। তবে দাম না বাড়ালে এ বছর লোকসানে যাওয়ার শঙ্কায় আছে তারা।

গত অর্থবছরে ৬৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। আগের বছর তাদের মুনাফা ছিল ৭৬ কোটি টাকা। তবে ডেসকো বলছে, বিদ্যুৎ বিক্রি করে তারা গত বছর লোকসান করেছে। অন্যান্য আয় থাকায় সব মিলিয়ে মুনাফা হয়েছে। গত অর্থবছরে সাড়ে ৭ কোটি টাকা লোকসান করেছে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। তার আগের বছর ২৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে তারা। তবে দাম বাড়ানো না হলে এবার আরও বেশি লোকসান হবে।

নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকোর) বলছে, পাইকারি দাম বাড়ানোয় বছরে ৫৩৫ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হবে। প্রতি ইউনিটে তাদের লোকসান হবে ১ টাকা ১৩ পয়সা। তাই দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে তারা। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানি নিট মুনাফা করেছে ৩১ কোটি টাকার বেশি। আগের বছর এটি ছিল প্রায় ১৮ কোটি টাকা।

এর আগে গত ১৪ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৯ বার। এ সময় পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। সর্বশেষ দাম বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যা ওই বছরের মার্চ থেকে কার্যকর হয়। ওই সময় পাইকারি পর্যায়ে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। একই সময় খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপর গত ডিসেম্বর থেকে আরেক দফা বাড়ে পাইকারি বিদ্যুতের দাম। এখন বাড়বে খুচরা পর্যায়ে।

তবে দাম বাড়ানোর বিকল্প প্রস্তাব রোববার শুনানিতে তুলে ধরবে ক্যাব। এ সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা রোধ করে বিদ্যুৎ খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। এটি না করে পাইকারি দাম বাড়িয়ে বাড়তি ৮ হাজার কোটি টাকা তোলা হচ্ছে। তা এখন সমন্বয়ের কথা বলা হচ্ছে। তবে খুচরা মূল্যবৃদ্ধি এড়ানো সম্ভব। বর্তমান চড়া মূল্যস্ফীতির সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই যৌক্তিক হবে না।

মহিউদ্দিন

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.