দেশের বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওকে কোম্পানি করের আওতায় আনা হয়েছে। নতুন আয়কর আইনে এনজিওকে কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে এসব সংস্থাকে সাড়ে ২৭ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
জাতীয় সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে বিল আকারে উত্থাপিত নতুন আয়কর আইনে কোম্পানির সংজ্ঞায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তাতে এনজিও ব্যুরো বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) থেকে নিবন্ধিত যেকোনো প্রতিষ্ঠান তথা এনজিও, শিল্প ও বাণিজ্য সংগঠন, যেকোনো ফাউন্ডেশন, সমিতি, সমবায় সমিতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানির সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্ধারিত করপোরেট বা কোম্পানি করহার ২৭ শতাংশ। তবে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে শর্ত মানতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান শর্ত না মানে, সে ক্ষেত্রে করহার বেড়ে ৩০ শতাংশে দাঁড়াবে।
এ ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের শর্ত হচ্ছে, সব ধরনের আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেনের ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকার বেশি হলে তা অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে স্থানান্তর করতে হবে। এ ছাড়া বছরে ৩৬ লাখ টাকার বেশি খরচ ও বিনিয়োগ অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। এ শর্ত না মানলে করহার আড়াই শতাংশ বেড়ে যাবে।
নতুন আয়কর আইনের ২(৩১) ধারায় কোম্পানির সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে এনজিওগুলোকে কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা প্রদানকারী কলেজকে ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের সঙ্গে দেওয়া অর্থবিলে এ করহার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঢালাওভাবে সব বেসরকারি সংস্থাকে কোম্পানি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার এ সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে দেশি-বিদেশি এনজিওগুলো হয়রানির মুখে পড়তে পারে। কারণ, কোম্পানি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে কর কর্মকর্তাদের ওপর একধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এখন তারা প্রতিষ্ঠান ও তাদের কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বাড়তি করের চাপ তৈরি করতে পারে।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘বর্তমানে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মূল অনুদান বা আর্থিক সহায়তা করমুক্ত। কিন্তু আমরা অতীতে দেখেছি, বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া অনুদানের ওপরও করারোপ করা হয়েছে। যেটা আয় নয়, সেটাকে আয় হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। নতুন আইনে বেসরকারি সংস্থাকে কোম্পানি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। তাতে এনজিওগুলোর হয়রানির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
এদিকে আয়কর আইনের ৭৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যেসব কোম্পানির বার্ষিক লেনদেন বা টার্নওভার দুই কোটি টাকার বেশি, তাদের সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের মাধ্যমে নিরীক্ষা প্রতিবেদন রিটার্নের সঙ্গে এনবিআরে জমা দিতে হবে। এর ফলে ছোটখাটো কোম্পানির খরচ বাড়বে। অন্যদিকে এনজিও ব্যুরো থেকে কোনো তহবিল পেতে হলে রিটার্ন জমার রসিদ দেখাতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। নতুন আইনের ২৬৪ ধারায় এই বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া কোম্পানির সংজ্ঞা পরিবর্তনের ফলে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সুদ আয়ের ওপর উৎসে করের পরিমাণও বেড়ে যাবে। আমানতের সুদ আয়ের ওপর ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ উৎসে অগ্রিম কর দিতে হবে নতুন আইনটি কার্যকর হলে।
প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো উৎসে কর কেটেছে কি না, সে জন্য নিরীক্ষা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কর কর্মকর্তাদের। পাশাপাশি জরিমানা ও শাস্তিও দিতে পারবে তারা। এ জন্য কর আদায়সংক্রান্ত কোনো মামলায় আদালত কোনো কর কর্মকর্তাকে দায়ী করতে পারবেন না বলেও আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব কারণে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।