ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে যেতে শরীয়তপুরগামী পদ্মা পরিবহনের বাসটিতে উঠেছিলেন মোহাম্মদ শামীম। তবে বাড়িতে পৌঁছার আগেই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিনি এখন মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। মোহাম্মদ শামীম বলেন, ‘আমাদের বাসটি প্রথম দিকে খুব বেপরোয়াভাবে চলছিল। ষোলঘর এলাকায় এসে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এরপর আর জ্ঞান ছিল না। পরে দেখলাম, আমি হাসপাতালে। শুনলাম, অনেকেই মারা গেছে।’
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে (ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে) দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে এক্সপ্রেসওয়ের ষোলঘর নামের স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পেছনে দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বাস ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার লেকুরিয়া গ্রামের হাবিব মিয়ার ছেলে সাইফুল (৩৫), সখিপুর থানার নূর মোহাম্মদের স্ত্রী হাজেরা খাতুন (৬০), নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর গ্রামের আরিফ কাজী (৩২) ও অজ্ঞাতনামা এক নারী (২৫)।
দুর্ঘটনায় আহত হয়ে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা ১৯ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন বিউটি আক্তার (২৫), তাহিরা (১৫), আকাশ পাটোয়ারী (২৫), বীথি (৩০), আরিফ (২০), রাসেল (২৫), চাঁপা (১০), মারিয়া আক্তার (১), সাকিরা (৩০), মো. সুলতান (৩০), মো. আকাশ (২০), মো. শামীম (২০), সেলিম মিয়া (৩০), আবদুল বাসেদ (২৫), বিল্লাল (২৫), জান্নাত আক্তার (২০), মো. সালাউদ্দিন, সেলিম মিয়া (১৯) ও মো. আরিফ (২৭)। তাঁদের মধ্যে ১৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিডফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার সময় স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন মহাসড়কের পাশে ষোলঘর মসজিদে বসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সড়কে মাওয়ামুখী একটি ট্রাক দাঁড়ানো ছিল। সকাল পৌনে নয়টার দিকে শরীয়তপুরগামী পদ্মা ট্রাভেলসের একটি যাত্রীবাহী বাস ট্রাকটিকে ধাক্কা দেয়। আমরা দৌড়ে আসি। ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যায়।’
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর কবরস্থান–সংলগ্ন এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের সঙ্গে শরীয়তপুরগামী পদ্মা ট্রাভেলসের একটি যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত দুজনের লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।
শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডাক্তার শংকর কুমার পাল বলেন, সকাল ৯টার দিকে ২১ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন নারী ও একজন পুরুষ মৃত ছিলেন। বাকি ১৯ জনের মধ্যে ১৩ জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মিডফোর্ট হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ছয়জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও ট্রাকটিকে রেকার দিয়ে সরিয়ে নিচ্ছেন।
মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর-লৌহজং সার্কেল) মো. তোফায়েল সরকার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বলেন, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর তাঁরা পেয়েছেন। তিনি বলেন, মূলত বাসটি বেপরোয়া গতিতে ছিল। ষোলঘর এলাকায় ট্রাকটিকে ডিঙিয়ে আগে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।