একবারে কতটা বাদাম খাওয়া নিরাপদ

0
21
বাদাম

বাদাম সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার। রোজ বাদাম খেতে উৎসাহ দেওয়া হয়। তবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির একবারে কতটা বাদাম খাওয়া নিরাপদ, তা–ও জানা থাকা প্রয়োজন। এ বিষয়ে রাফিয়া আলমকে জানালেন ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা আকতার

বাদামে যা আছে

প্রতি ১০০ গ্রাম বাদাম থেকে সাড়ে ৫০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাবেন আপনি। বাদামের ধরন অনুযায়ী ক্যালরির পরিমাণে কিছুটা তফাত হয়। এ পরিমাণ সাড়ে ৬০০ ক্যালরি বা তার একটু বেশিও হতে পারে।

বাদামে আছে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড। এই ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দেহে এইচডিএল অর্থাৎ ভালো চর্বির মাত্রা বাড়ানোর জন্য রোজ বাদাম খাওয়া উচিত। এইচডিএল আমাদের দেহের বিভিন্ন স্থান থেকে কোলেস্টেরলকে বয়ে নিয়ে যায় লিভারে।

লিভারে পৌঁছানো সেই কোলেস্টেরল নানান ধাপ পেরিয়ে একসময় শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো মারাত্মক সব রোগের ঝুঁকি কমে।

বাদামে আরও আছে প্রোটিন বা আমিষ। ভিটামিন ই, থায়ামিন, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, ফলিক অ্যাসিড, জিংক, কপার, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সেলেনিয়ামসহ আরও কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাবেন বাদামে। বুঝতেই পারছেন, সুস্থতা ও সৌন্দর্যের জন্য বাদাম চমৎকার এক খাবার।

একবারে কতটা খাবেন

পুষ্টিগুণে বাদাম দারুণ। তবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সারা দিনে ৩০ গ্রাম বাদাম খাওয়াই যথেষ্ট।

সাধারণভাবে খোসা ছাড়ানো এক মুঠো বাদাম বলতে যতটা বোঝায়, তাতেই হয়ে যায় ৩০ গ্রাম। এক দিনে এর বেশি বাদাম খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে বাদাম জনপ্রিয়। সারা দিনের প্রয়োজনীয় ৩০ গ্রাম বাদাম আপনি চাইলে একবারেই খেয়ে নিতে পারেন। তাতে ক্ষতি নেই। কিংবা চাইলে ভাগ করেও খেতে পারেন সারা দিনের বিভিন্ন সময়ে।

নানা ধরনের বাদাম মিলিয়েও খেতে পছন্দ করেন অনেকে। এটিও ভালো অভ্যাস। মিশ্র বাদাম খেলেও বাদামের মোট পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখুন একইভাবে।

রোস্টেড বা সল্টেড বাদাম এড়িয়ে চলুন
রোস্টেড বা সল্টেড বাদাম এড়িয়ে চলুনছবি: পেক্সেলস

বেশি খেলে ক্ষতি কী

একবারে ৩০ গ্রামের বেশি বাদাম খেলে অ্যাসিডিটিতে ভুগতে পারেন আপনি। একবারে খুব বেশি পরিমাণ বাদাম খেলে বমি বমি ভাব কিংবা পেটে অস্বস্তি হতে পারে।

আর সারা দিনে মোট বাদামের পরিমাণ যদি খুব বেশি হয়ে যায়, তাহলে আবার আরেক বিপত্তি। বাদামে বেশ খানিকটা ক্যালরি থাকে, তাই খুব বেশি বাদাম খেলে আপনার সারা দিনের মোট ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত বাদাম খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে আপনার জন্য।

স্বাদ বাড়াতে বাদামে লবণ, চিনি ও অন্যান্য মসলা যোগ করা হয়। তবে বাড়তি লবণ ও চিনি স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। তাই এসব উপাদান যোগ করা বাদাম, যেমন রোস্টেড বা সল্টেড বাদাম এড়িয়ে চলুন।

খেয়াল রাখুন

বাজারের প্যাকেটজাত বাদাম স্বাস্থ্যকর তেল দিয়ে ভাজা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিত না–ও হতে পারেন। অস্বাস্থ্যকর তেলে বাদাম ভাজা হলে তা আর স্বাস্থ্যকর থাকে না।

বাদাম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া আবশ্যক।
ক্ষুধা মেটানোর জন্য স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক হিসেবে আপনি বাদামের সঙ্গে আরও কিছু খাবার গ্রহণ করতে পারেন। যেমন টক দই আর বাদাম খেতে পারেন।

একটা কলা বা অন্য কোনো ফলও খেতে পারেন। তাহলে বাদামের পরিমাণ সীমিত রাখা সহজ হবে।

বাদাম

এটা ঠিক যে একবারে ৩০ গ্রাম বাদাম খাওয়া নিরাপদ। তবে এ–ও খেয়াল রাখতে হবে, নানান ধরনের বাদামে অ্যালার্জি থাকে অনেকেরই। তাই আপনি যদি এমন কোনো বাদাম খান, যা আগে কখনো খাননি, তাহলে একটু রয়েসয়ে শুরু করুন।

শুরুতেই ৩০ গ্রাম না খাওয়াই ভালো। প্রথমে অল্প পরিমাণে খেয়ে দেখুন, কোনো প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না। সব ঠিক থাকলে পরের বার পরিমাণ বাড়াতে পারেন, তবে ৩০ গ্রামের বেশি নয়।

কিডনির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কতটা বাদাম খেতে পারবেন, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.