রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির জঙ্গল ইউনিয়নের সমাধীনগর গ্রামের একই পরিবারে এক সঙ্গে তিনজন বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
৪৮তম বিসিএসে উত্তীর্ণরা হলেন- ডা. শিবাজী প্রসাদ বিশ্বাস, তার ছোট ভাই ডা. গৌরব বিশ্বাস এবং শিবাজীর স্ত্রী ডা. ইন্দ্রানী সাহা।
শিবাজী ও গৌরব প্রয়াত বিনয় কৃঞ্চ বিশ্বাস ও নীলিমা রানী বিশ্বাসের সন্তান। তাদের বাবা সমাধীনগর আর্য্য সংঘ বিদ্যামন্দির মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন এবং মা সাধুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক। অন্যদিকে ইন্দ্রানী সাহা শিবাজীর স্ত্রী। তিনি বরিশালের অজয় সাহা ও লিপিকা সাহার মেয়ে।
স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত শিবানী প্রসাদ জানান, তাদের বাবার খুব ইচ্ছা ছিল তার দুই সন্তানের অন্তত একজন হলেও যেন চিকিৎসক হন। দেশের মানুষের সেবায় যেন সে নিবেদিত থাকে। তারা বাবা মারা যান ২০১৪ সালে। বাবার মৃত্যুর পর তারা খুব হতাশ হয়ে পড়েন। তাদের মা তাদেরকে আগলে রাখেন। বাবার ইচ্ছার কথা স্মরণে রেখে তারা দুই ভাই পড়াশোনা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা দুই ভাই মেডিকেলে ভর্তিও সুযোগ পান। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেটাও তার বাবা দেখে যেতে পারেননি।
তিনি জানান, তাদের বাবা বেঁচে না থাকলেও তাদের বাবার সেই ইচ্ছা তারা লালন করে চলছেন। তাদের বাবার স্বপ্ন পূরণে তারা কাজ করবেন। দেশের মানুষের সেবায় তারা নিজেদেরকে সব সময় নিয়োজিত রাখবেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও জানান, তাদের ইচ্ছা ছিল যেকোনো এক ভাই দেশের বাইরে চলে যাবেন। কিন্তু তাদের বাবা সেটা পছন্দ করতেন না। দেশের প্রতি তার বাবার একটা অন্য রকম ভালোবাসা ছিল, টান ছিল। বাবার সেই দেশপ্রেমকে তারা সম্মান জানান। দুই ভাইসহ ইন্দ্রানী দেশের মানুষের সেবায় তারা বাকী জীবন কাটাবেন। মানুষের সেবার মধ্য দিয়েই তারা তাদের বাবাকে স্মরণ করবেন। সবার কাছে তারা দোয়া চান।
প্রতিবেশী অমিয় প্রসাদ রায় জানান, একই পরিবারের তিনজন বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ায় শুধু পরিবার নয়, পুরো এলাকাই আনন্দে উচ্ছ্বসিত।
সুপারিশপ্রাপ্ত তিনজনের মা নীলিমা রানি বিশ্বাস জানান, আজ ওদের বাবা বেঁচে থাকলে খুবই খুশি হতেন। তার জীবনদশায় সে তার সন্তানদের সফলতা দেখে যেতে পারল না। এটা তাদের পরিবারের জন্য খুবই কষ্টের। এই আনন্দের খবরেও তারা মর্মাহত। তবে তার একমাত্র চাওয়া, সন্তানরা যেন দেশের মানুষের সেবার মধ্য দিয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করে।
জানা গেছে, শিবাজী প্রসাদ বিশ্বাস ২০১২ সালে সমাধীনগর আর্য্য সংঘ বিদ্যামন্দির মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। বর্তমান শিবাজী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে এফসিপিএস (মেডিসিন) পার্ট-২ কোর্স করছেন।
তার ছোট ভাই গৌরব বিশ্বাস ২০১৪ সালে সমাধীনগর আর্য্য সংঘ বিদ্যামন্দির মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৬ সালে দ্বারিয়াপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। বর্তমান গৌরব বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমডি (ইন্টারনাল মেডিসিন) কোর্স করছেন রেসিডেন্ট হিসেবে।
শিবানী প্রাসাদের স্ত্রী ইন্দ্রানী সাহা ২০১৫ সালে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৭ সালে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। বর্তমান ইন্দ্রানী সাহা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে এফসিপিএস (গাইনি ও অবস) পার্ট-২ কোর্স করছেন।