এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল, নিজেদের রেকর্ড ভাঙতে পারবে কি বার্সা

0
15
হান্সি ফ্লিকের অধীনে চলতি মৌসুমে দারুণ খেলছে বার্সা, এএফপি

লা লিগায় বার্সেলোনার হাতে আছে আরও ৪ ম্যাচ। চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে ফিরতি লেগও বাকি। ফিরতি লেগ জিততে পারলে ফাইনাল। অর্থাৎ চলতি মৌসুমে সম্ভাব্যতা বিচারে বার্সার হাতে আছে আরও ৬ ম্যাচ। রেকর্ডটি গড়তে এই ৬ ম্যাচে বার্সার চাই ৩১ গোল। অর্থাৎ ম্যাচপ্রতি চাই ৫.১৬টি করে গোল, যা অঙ্কের হিসাবে সম্ভব হলেও ফুটবল খেলার ‘ল অব অ্যাভারেজ’ অনুযায়ী প্রায় অসম্ভব।

তাই বলে কি রেকর্ডটির পিছু ছুটবে না বার্সা? নাহ, সেটা হতেই পারে না! চলতি মৌসুমে হান্সি ফ্লিকের দল মাঠে চোখধাঁধানো ফুটবল খেলছে, সেই আত্মবিশ্বাস থেকে লামিনে ইয়ামাল-রাফিনিয়ারা অন্তত এ রেকর্ডের পিছু ছুটতেই পারেন। হোক বা না হোক, অন্তত নিজেদের দৌড়টা কত দূর, তা মেপে নিতে পারে ফ্লিকের দল।

প্রশ্ন হচ্ছে কিসের রেকর্ড? এক মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সেলোনার সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। সেটা পেপ গার্দিওলার বার্সার দখলে। ২০১১-১২ মৌসুম ছিল বার্সা কোচ হিসেবে গার্দিওলার শেষ মৌসুম। সেবার ৬৪ ম্যাচে ১৯০ গোল করেছিলেন লিওনেল মেসিরা, যা একুশ শতকে ইউরোপিয়ান রেকর্ডও।

বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক
বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক, এএফপি

বার্সা এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৫ ম্যাচে করেছে ১৬০ গোল। ইউরোপে এবারের মৌসুমে বার্সার গোলসংখ্যা সবচেয়ে বেশি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে পৌঁছাতে পারলে এ মৌসুমে মোট ৬১ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে ফ্লিকের দল। সম্ভাব্য বাকি ৬ ম্যাচে ফ্লিকের বার্সা গার্দিওলার বার্সার সেই কীর্তিকে ধরতে পারবে না, এটা ভেবে নেওয়াই স্বাভাবিক। তবে শীর্ষ তিনে তো পৌঁছাতে পারেই।

নিজেদের ইতিহাসে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় শীর্ষ তিনে জায়গা করে নিতে ফ্লিকের বার্সার চাই আর ১৪ গোল। ২০১৫-১৬ মৌসুমে ৬২ ম্যাচে ১৭৩ গোল করা লুইস এনরিকের বার্সেলোনা এ তালিকায় তৃতীয়। একই কোচের হাত ধরে আগের মৌসুমে (২০১৪-১৫) ‘ট্রেবল’ জেতা বার্সার গোলসংখ্যা ছিল ৬০ ম্যাচে ১৭৫। তালিকার দুইয়ে এনরিকের বার্সার ২০১৪-১৫ মৌসুম।

বার্সা কোচ হিসেবে এবারই ফ্লিকের প্রথম মৌসুম। আর প্রথম মৌসুমেই ম্যাচপ্রতি গড়ে ২.৯১টি করে গোল করছেন তাঁর শিষ্যরা। ম্যাচপ্রতি গড় গোলের হিসাবে ফ্লিকের বার্সা কাতালান ক্লাবটির ইতিহাসে শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে। এনরিকের ট্রেবলজয়ী বার্সা ম্যাচপ্রতি গড়ে ২.৯২টি করে গোল নিয়ে চারে, ১৯৫৯-৬০ মৌসুমে ৫২ ম্যাচে গড়ে ২.৯৬টি করে গোল নিয়ে তিনে হেলেনো হেরেইরার বার্সা, গার্দিওলার ২০১১-১২ মৌসুমের বার্সা ৬৪ ম্যাচে গড়ে ২.৯৭টি করে গোল নিয়ে দুইয়ে। আর শীর্ষে? ১৯৫১-৫২ মৌসুমে ফার্দিনান্দ দাউচিকের বার্সা। ৪০ ম্যাচে ম্যাচপ্রতি গড়ে ৩.২৩টি করে গোল করেছিল দাউচিকের বার্সা। মৌসুমে অন্তত ৪০ ম্যাচ খেলেছে, এই বিবেচনায় হিসাবটি বের করা হয়েছে।

গার্দিওলার ২০১১-১২ মৌসুমের বার্সার আক্রমণভাগ ‘ত্রয়ী’ ফরোয়ার্ডে সাজানো ছিল না। এনরিকের অধীনে ২০১৪-১৫, (১৭৫ গোল) ২০১৫-১৬ (১৭৩ গোল) ও ২০১৬-১৭ (১৭১ গোল) মৌসুমে বার্সার এত গোলের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ‘এমএসএন’ (মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ) জুটি।

মজার বিষয়, এবারও ফ্লিকের হাতে আছে এমন আক্রমণভাগ—রবার্ট লেভানডফস্কি, লামিনে ইয়ামাল ও রাফিনিয়া। গত শনিবার রাতে বার্সা নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে রিয়াল ভায়োদোলিদের বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে। গোল করেন রাফিনিয়া ও ফেরান তোরেস। এ দুটি গোল দিয়ে ২০০৮-০৯ মৌসুম ও ২০১২-১৩ মৌসুমে বার্সার ১৫৮ গোলকে পেছনে ফেলেছে ফ্লিকের বার্সা।

দলকে ‘গোলস্কোরিং মেশিন’ বানানো ফ্লিকের জন্য নতুন না। বায়ার্ন মিউনিখের কোচ থাকতে ২০১৯-২০ মৌসুমে ট্রেবল জয়ের পথে সেই দলটিকে বায়ার্নের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডটি এনে দেন। যদিও সে মৌসুমের শুরু থেকে বায়ার্নের কোচের দায়িত্বে তিনি ছিলেন না, নিকো কোভাচ যাওয়ার পর ফ্লিক দায়িত্ব এবং তাঁর অধীনেই গোল করায় আরও ক্ষুরধার হয়ে ওঠে বায়ার্ন। সে মৌসুমে ৫২ ম্যাচে ১৫৯ গোল করা বায়ার্ন ম্যাচপ্রতি গড়ে ৩.০৫৭টি করে গোল করেছিল। এই পথে ফ্লিকের বায়ার্ন ভেঙেছিল ১৯৭১-৭২ মৌসুমে ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, পল ব্রাইটনার, উলি হোয়েনেসদের গড়া ৫২ ম্যাচে ১৫২ গোলের রেকর্ড।

চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের মৌসুমে ১৩ ম্যাচে ৪০ গোল করেছে ফ্লিকের বার্সা। প্রতিযোগিতাটির এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ভাঙতে বার্সার চাই আর ৬ গোল। সেমিফাইনাল ফিরতি লেগ জিতে ফাইনালে উঠতে পারলে বার্সার এই রেকর্ডটি গড়ার সুযোগ ভালোভাবেই থাকবে। চ্যাম্পিয়নস লিগের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৪৫ গোলের রেকর্ড (১৬ ম্যাচ) বার্সারই, ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে। ১১ ম্যাচে ৪৩ গোল নিয়ে এ তালিকার দুইয়ে ফ্লিকেরই ২০১৯-২০ মৌসুমের বায়ার্ন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.