মেহেদী হাসানের ক্যারিয়ার একটু বিচিত্রই। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল টি-টোয়েন্টি দিয়ে। এরপর দুই বছর বাইরে ছিলেন। ২০২১ ও ২০২২ সালে খেলেছেন নিয়মিতই। তবে গত বছর এশিয়া কাপের পর আবার বাদ। দলে তাঁর ভূমিকাও বদলেছে বারবার। ব্যাটিংয়ে ইনিংস উদ্বোধন যেমন করেছেন, তেমনি খেলেছেন ৯ নম্বরেও। বোলিংয়ে উদ্বোধন যেমন করেছেন, তেমনি সবার শেষেও এসেছেন বেশ কয়েকবার।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছিলেন ৩ ম্যাচে, তাতে নেন ৬ উইকেট। নিউজিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি এরপরও, কিন্তু সুযোগ পান টি-টোয়েন্টিতে। যে সংস্করণে এক বছরের বেশি সময় খেলেননি তিনি। নেপিয়ারে আজ মাঠে এসে ওয়ার্মআপের আগে জানতে পারেন, একাদশে থাকছেন তিনি।
মূলত উইকেট ধরে আঁটসাঁট বোলিং করতে পারেন, গুডলেংথকে মানেন নিজের শক্তির জায়গা। তাঁর অন্যতম ভরসা গতির বৈচিত্র্য। যে মাঠে ঠিক আগের আন্তর্জাতিক ম্যাচেই দলের সব কটি উইকেট নিয়েছেন পেসাররা, সেখানে মেহেদীকে প্রথম ওভারে আনলেন নাজমুল। তাঁকে ঘিরে যে স্পষ্ট পরিকল্পনা আছে, বোঝা গেছে তাতেই।
টিম সাইফার্টকে প্রথম ওভারেই বোল্ড করে বাংলাদেশের বোলিংয়ের সুরটা ধরিয়ে দেন এ অফ স্পিনারই। দ্রুত ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও ড্যারিল মিচেল পালটা আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন, তিনিও মেহেদীর শিকার। টার্ন আশা করে খেলেছিলেন মিচেল, তবে লাইন ধরে রাখা বল মিস করে বোল্ড তিনিও। পাওয়ারপ্লেতে ২ ওভার বোলিং করে ৫ রানে ২ উইকেট—মেহেদীর কাছ থেকে আর কীই–বা চাইতে পারতেন নাজমুল!
টি-টোয়েন্টিতে নতুন বলে বোলিং যে তাঁর কাছে মোটেও নতুন নয়, আগের ৩৯ ম্যাচের মধ্যে ২১ বারই এমন করা মেহেদী ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটি, ‘চ্যালেঞ্জ না। আমি টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ওভার করার ক্ষেত্রে অভ্যস্ত। সেটা যে কন্ডিশনেই হোক। আমার কাজ বোলিং করা, আমাকে করতে হবে। আসলে টিম ম্যানেজমেন্ট আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে, আমাকে করতে হবে।’
মেহেদী কৃতিত্ব দিয়েছেন সতীর্থদেরও, ‘পেসাররা ভালো করেছে। দল জিততে হলে সবার পারফরম্যান্সটা গুরুত্বপূর্ণ। এক-দুজনের পারফরম্যান্স নয়। স্পিনাররা সবাই ভালো করেছে, পেসাররাও। এ জন্যই ওদের এত কম রানে থামাতে পেরেছি এবং জিতেছি।’
ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের বোলিং পারফরম্যান্স সবার আত্মবিশ্বাস দিয়েছে বলেও মনে করেন তিনি, ‘বোলাররা যখন দলের জন্য ভালো একটা সহায়তা দেবে, তখন দলের আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে যায়। শেষ ম্যাচে যেমন বোলিং বিভাগটা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। বোলারদের মধ্যে সেটি আছে, এমন কন্ডিশনে স্মার্ট বোলিং করতে হবে। মাশাআল্লাহ যে কজনই বোলিং করেছে, সবাই মিলে ভালো বোলিং করেছে।’
বোলিংয়ে ১৪ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন, এ ম্যাচে ৪ ওভার বোলিং করেও ২০ রানের কম দিয়েছেন আরও তিনজন বোলার। মেহেদীকে যে সহজে আলাদা করা যাবে, তা হয়তো নয়। তবে ব্যাটিংয়েও মেহেদী রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ১৩৫ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের রান তাড়া যে একেবারে মসৃণ ছিল, তা নয়। লিটন দাসের দেওয়া সুযোগ নিউজিল্যান্ড নিতে পারলে তো পরিস্থিতি বদলেও যেতে পারত। মেহেদী অবশ্য তাঁর কাজটি করেছেন ঠিকই। ১৬ বলে ১৯ রানের অপরাজিত ইনিংসটিই হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ।
খেলোয়াড় হিসেবে কখনোই ‘নেতিবাচক কিছু ভাবেন না’, এমন দাবি করা মেহেদী থাকতে চেয়েছেন ইতিবাচকই, ‘লিটন যেহেতু লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করছিল, উইকেট সম্পর্কে ওর ভালো ধারণা ছিল। এই ম্যাচটা জিততে ছোট একটা জুটি দরকার ছিল। আমাদের ভালো জুটি হচ্ছিল। কিন্তু মাঝে দু-তিনটা উইকেট চলে যায়। তখন লিটন বলছিল ইতিবাচক থাকতে, স্বাভাবিক খেলতে বলছিল। যা হবে শেষ দুই ওভারে দেখা যাবে।’
শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১০ রান, মেহেদীর মারা ছক্কা ও চারে তা তুলে ফেলে বাংলাদেশ। যে ম্যাচে বাংলাদেশের জয় এসেছে দলীয় পারফরম্যান্সে ভর করে, সেখানেই মেহেদী ম্যাচসেরা। নিজের ৫০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথমবার, সেটিও এমন সংস্করণে, যেখানে ফিরেছেন এক বছরের বেশি সময় পর—অনেকটা নিভৃতেই।
মেহেদীর ক্যারিয়ার আসলেই বিচিত্র।