চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট দিতে নগরের নয়াবাজার এয়াকুব আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৬ নম্বর কক্ষে যান সায়রা বানু। বয়স ৬০ বছরের মতো। কক্ষটিতে আগে থেকে তৎপর ছিলেন জেনিফার নামে এক নারী।
ভোটার নম্বর যাচাইয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর তিনি সায়রা বানুর সঙ্গে গোপন কক্ষে ঢুকে পড়েন। ছবি তুলতে দেখে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করেন। ভোট দেওয়ার পর সায়রা বানু বের হয়ে আসেন। কিন্তু জেনিফার বের হতে ইতস্তত বোধ করছিলেন। একসময় বের হলেন। কেন ভেতরে গিয়েছিলেন জানতে চাইলে জেনিফার বলেন, ‘এই বৃদ্ধা জানেন না কীভাবে ভোট দেবেন। তাই একটু সাহায্য করেছি।’
পরিচয় জানতে চাইলে জেনিফার কেন্দ্রে দায়িত্বপালন করছেন বলে জানান। কিসের দায়িত্ব পালন করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের তদারকি করছি।’
গোপন কক্ষে নৌকার কেন্দ্র সচিব, বললেন ‘দেখিয়ে দিলে ভোট দ্রুত হয়’
তাঁকে কে দায়িত্ব দিয়েছে, তিনি নৌকার এজেন্ট কিনা জানতে চাওয়া হলে জেনিফার বলেন, ‘এজেন্ট নয়। এখানে আমরা নৌকার পক্ষে কাজ করছি সবাই।’
সায়রা বানুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁকে কয়েকজন মিলে টেনে নিয়ে চলে যান।
কেন্দ্রটির সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেখিয়ে দিতে তিনি (জেনিফার) কক্ষে ঢুকছিলেন।’
এভাবে দেখিয়ে দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তরিকুল বলেন, ‘অন্য কিছু করছে না। তার পরও আমি নিষেধ করেছি।’
এই কেন্দ্রটির ৮ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৭১ জন। ১২ টা পর্যন্ত ভোট পরেছে ৩০৪ টি।
গোপন কক্ষে দ্বিতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. গোফরান বলেন, ‘সকালে একজনকে গোপন কক্ষে ঢোকায় বের করে দিয়েছি। এখন যদি আবার ঢুকে আমি দেখব।’
চট্টগ্রাম-১০ আসনে উপনির্বাচন: কেন্দ্রে শুধু নৌকার এজেন্ট, অন্যদের দেখা নেই
একই প্রতিষ্ঠানের পুরুষ কেন্দ্রেও ছিল অবাঞ্ছিত ব্যক্তির উপস্থিতি। নিউ টাইগারপাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা একটায় দেখা যায়, ২ নম্বর কক্ষে মাইনুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বারবার ভোটারদের সঙ্গে গোপন কক্ষে ঢুকছিলেন। জানতে চাইলে মাইনুদ্দিন বলেন, ‘আমি ভোটদানে সহযোগিতা করছিলাম। আমার ছবিটা কেটে দিয়েন।’
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, ‘কে ঢুকছে? আমি তো দেখিনি। তবে সকালের দিকে একটু লোকজন বেশি ছিল। প্রার্থীর সেন্টারতো। ভোটও তুলনামূলক ভালো পড়েছে।’
নিউ টাইগারপাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৩১৯ জন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেছেন, বেলা ১ টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ৭০০ এর মতো ভোট পড়েছে।
এখানে সকাল সাড়ে ৮ টায় ভোট দেন নৌকার প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু। চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের আফছারুল আমীন। গত ২ জুন ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে আসনটিকে শূন্য ঘোষণা করা হয়। গত ৮ জুন এই আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।