এই পাঁচ তথ্য চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে ভুল করছেন না তো?

0
19
অফিসের কাজ, পড়াশোনা, ফেসবুকে ক্যাপশন ঠিক করা থেকে শুরু করে আমাদের মন খারাপের সঙ্গী হয়ে উঠেছে চ্যাটজিপিটি, ছবি: রয়টার্স

অফিসের কাজ হোক বা পড়াশোনা, ফেসবুকে ক্যাপশন ঠিক করা থেকে শুরু করে আজকাল আমাদের মন খারাপের সঙ্গী হয়ে উঠেছে চ্যাটজিপিটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই বন্ধু এখন কেবল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নয়, গবেষণা, লেখালেখি ও প্রতিদিনের সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সাহায্য করছে। তবে এ ধরনের প্রযুক্তির সুবিধার পাশাপাশি কিছু ঝুঁকিও আছে; বিশেষ করে যদি এসব ব্যবহার করা হয় অসচেতনভাবে। প্রযুক্তির এই যুগে তথ্যই বড় সম্পদ, তাই কোথায়, কখন, কার সঙ্গে কী তথ্য ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন, তা খেয়াল রাখা অতি জরুরি। জেনে নিন কোন পাঁচটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কখনোই চ্যাটজিপিটি বা অন্য কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবটের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়।

১. ব্যক্তিগত শনাক্তকরণ তথ্য (পার্সোনালি আইডেন্টিফাইঅ্যাবল ইনফরম্যাশন বা পিআইআই)

ব্যক্তিগত শনাক্তকরণ তথ্য বলতে বোঝায় এমন যেকোনো তথ্য, যা কারও পরিচয় স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে বা বর্ণনা করে। যেমন ব্যবহারকারীর পূর্ণ নাম, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ঠিকানা, ফোন নম্বর ও ই–মেইল। চ্যাটজিপিটি ইচ্ছাকৃতভাবে এসব তথ্য সংরক্ষণ করে না বটে, তবে সাইবার আক্রমণ বা তথ্য ফাঁসের মতো ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যায়। হ্যাকাররা এসব তথ্য ব্যবহার করে পরিচয় চুরি, ব্যাংক জালিয়াতির মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই নিজের পরিচয় ও আর্থিক নিরাপত্তা রক্ষা করতে এসব তথ্য এআইকে না দেওয়াই শ্রেয়।

২. আর্থিক ও ব্যাংকিং তথ্য

ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটি, মোবাইল ব্যাংকিং পিন বা পেমেন্ট গেটওয়ে সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য চ্যাটজিপিটির মতো প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করাটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এ ধরনের তথ্য যদি কোনোভাবে ফাঁস হয়, তাহলে অসাধু লোকেরা এসব তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংক জালিয়াতি করে ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খালি করে দিতে পারে মুহূর্তেই। আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার মতো ভয়াবহ ফল ডেকে আনতে পারে।

ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটি, মোবাইল ব্যাংকিং পিন  চ্যাটজিপিটির মতো প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করাটা  বিপজ্জনক
ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটি, মোবাইল ব্যাংকিং পিন চ্যাটজিপিটির মতো প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করাটা বিপজ্জনক, ছবি: রয়টার্স

৩. পাসওয়ার্ড ও লগইন তথ্য

এআইকে এ ধরনের তথ্য দিলে তা হ্যাক বা অবৈধ প্রবেশের জন্য সুযোগ করে দেয়। তাই প্রতিটি অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু রাখা বাঞ্ছনীয়। কখনোই কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এসব তথ্য না দিয়ে সচেতনভাবে নিজের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. ব্যক্তিগত বা গোপনীয় তথ্য

এআইয়ের চ্যাটবট ভাষা জানা প্রোগ্রামিং মডেল ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি মানুষের মতো বিবেক দিয়ে কিছু চিন্তা করে না বা প্রেক্ষাপট বোঝে না, ফলে গোপন বা সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য এআইয়ে ব্যবহার করলে তা অনিচ্ছাকৃতভাবে ফাঁস হয়ে যেতে পারে। তা ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা পারিবারিক সংবেদনশীল তথ্য বা কর্মস্থলের গোপন কোনো পরিকল্পনাই হোক না কেন, এ ধরনের কোনো কিছুই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত নয়। এর ফলে পারিবারিক বা পেশাগত সম্পর্কের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি তৈরি হতে পারে আইনি জটিলতাও।

৫. স্বত্বাধিকার বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি (ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি)

নিজের উদ্ভাবনী ধারণা, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, কোডিং বা ডিজাইন, আর্টওয়ার্ক—এসব নিঃসন্দেহেই আপনার মেধাসম্পদ, যা আপনি লালন করেন। চ্যাটজিপিটিতে এসব তথ্য দিলে তা সংরক্ষিত ডেটা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, এমনকি অন্যের কাছেও পৌঁছে যেতে পারে। এতে আইনি সমস্যা, মেধাসম্পদের চুরি অথবা আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। তাই নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত কোনো ধরনের উদ্ভাবনী ধারণা বা পরিকল্পনা অথবা স্বত্বাধিকারযুক্ত কনটেন্ট এআইকে না দেওয়াই ভালো।

এআইকে ব্যক্তিগত তথ্য দিলে তা হ্যাক বা অবৈধ প্রবেশের জন্য সুযোগ করে দেয়
এআইকে ব্যক্তিগত তথ্য দিলে তা হ্যাক বা অবৈধ প্রবেশের জন্য সুযোগ করে দেয়, ছবি: রয়টার্স

তথ্যের সুরক্ষা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

আজকের প্রযুক্তির জগতে তথ্য ফাঁস একটি বড় সমস্যা। সাইবার অপরাধীরা নিয়মিত এআইভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে আক্রমণ চালায় এর নিরাপত্তার দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে। বিশেষভাবে লক্ষ করা গেছে ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যে এক লাখেরও বেশি চ্যাটজিপিটি অ্যাকাউন্টের তথ্য–উপাত্ত হ্যাক হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে বিক্রি হয়েছে ডার্ক ওয়েবে। এই ঘটনাই বলে দেয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যতই কার্যকর ও ক্ষমতাশালী হোক না কেন, সঠিক, সচেতন ও দায়িত্বশীল ব্যবহার ছাড়া এসব আমাদের নিরাপত্তার হুমকি হতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.