মঙ্গলবারের ৫৭২ কোটি টাকার লেনদেনে এসব শেয়ারের অংশ মাত্র ১২%, যার ৬২% ব্লকে
ফ্লোর প্রাইসের ফাঁদে আটকা পড়ে ‘এ’ ক্যাটেগরিভুক্ত ৬২ শতাংশ শেয়ারের তেমন লেনদেন হচ্ছে না। মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ‘এ’ ক্যাটেগরিভুক্ত ১৫৬ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ফ্লোর প্রাইসে পড়ে ছিল, যার ৫৩টির একটি শেয়ারও কেনাবেচা হয়নি।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকা এ ক্যাটেগরিভুক্ত ১০৩ কোম্পানির সাকল্যে ৬৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়, যা মোট লেনদেনের ১২ শতাংশ। অবশ্য এ লেনদেনের মধ্যে ৪২ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে ব্লক মার্কেটে। এদিন এ বাজারে ৫৭২ কোটি টাকারও বেশি দামের শেয়ার কেনাবেচা হয়। শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট অনেকের অভিযোগ, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার নাম করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কারসাজি চক্রকে গুটিকয় শেয়ার নিয়ে কারসাজির সুযোগ করে দিয়েছে। ভালো শেয়ার হিসেবে বিবেচিত শেয়ারগুলো এ ফাঁদে আটকে গেছে। কোম্পানির প্রকৃত ব্যবসা সাফল্য বা ব্যর্থতার ভিত্তিতে সেগুলোর বাজারদর নির্ধারিত হওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় কেউ এসব শেয়ারে বিনিয়োগে আগ্রহী নন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, বাজারে যখন ভালো শেয়ারগুলো কেনাবেচা হয় না, তখন কারসাজি চক্রের সুবিধা হয়। নানা গুজব ছড়িয়ে বা ছোট কোনো বিষয়কে অতিরঞ্জিত করে তথ্য ছড়ায়। আবার তারাই নিজেরা সংঘবদ্ধ হয়ে শেয়ার কেনাবেচা করে দর বাড়ান বলে প্রচার আছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সিংহভাগ অসচেতন বলে বা কেউ লোভে পড়ে এমন শেয়ার কিনে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল নতুন তালিকাভুক্ত ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ নামক মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডসহ ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯৩টিতে। এর মধ্যে ২৪২টি ফ্লোর প্রাইসে পড়ে ছিল। সার্বিক হিসাবে এ ক্যাটেগরিভুক্ত শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ছিল ২৫৩টি, যার ১৫৬টি ফ্লোর প্রাইসে। বি ক্যাটেগরিভুক্ত শেয়ার ১০৯টি, এর ৬৩টি ফ্লোর প্রাইসে। এ ছাড়া জেড ক্যাটেগরিভুক্ত ২৯ শেয়ারের ২৩টি ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে।
এ ক্যাটেগরিভুক্ত যে ৯৭ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের ওপরে কেনাবেচা হচ্ছে, সেগুলোর গতকালের লেনদেন মূল্য ছিল ৩০৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে এ ক্যাটেগরিভুক্ত ১৩ কোম্পানির ২২৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে। অর্থাৎ পুরো বাজারের লেনদেন গুটি কয় শেয়ারে ঘুরপাক খাচ্ছে। পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, আইডিএলসি, লিনডে বিডি, বিএসআরএম লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল, সিঙ্গার বাংলাদেশ, ওয়ালটন, বেক্সিমকো ফার্মা, ইবনে সিনা, রেনাটা, রেকিট বেনকিজার, স্কয়ার ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণফোনসহ উল্লেখযোগ্য ভালো শেয়ারের কোনো লেনদেন নেই। কিন্তু সি পার্ল হোটেল, সোনালী পেপার, জেমিনি সি ফুডসের মতো কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের শীর্ষে। শুধু লেনদেন নয়, এসব শেয়ারের দামও হু-হু করে বাড়ছে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা বলেন, শোনা যায় কোম্পানিগুলোর মালিকপক্ষ ও শেয়ারবাজারের কারসাজি চক্র মিলে এসব শেয়ারের দর বাড়াচ্ছে। বেশির ভাগ সময় তারা নিজেরা এসব শেয়ার কেনাবেচা করেন। ভালো শেয়ারের ক্রেতা না থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এসব শেয়ারে আকৃষ্ট করা সহজ হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
বাজার সংক্ষেপ গতকাল ডিএসইতে ৩১৬ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৮টির, কমেছে ৬৭টির এবং অপরিবর্তিত ১৭১টির। ক্রেতার অভাবে ৭৭ শেয়ার ও ফান্ডের কোনো লেনদেন হয়নি। এদিনও বীমা খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। খাতটির লেনদেন হওয়া ৫৪ কোম্পানির মধ্যে ৪১টির শেয়ারদর কমেছে, বেড়েছে ছয়টির এবং অপরিবর্তিত ছিল সাতটির দর।
অন্যদিকে প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, সিমেন্ট, তথ্য-প্রযুক্তি, চামড়া, কাগজ ও ছাপাখানা এবং বিবিধ খাতের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। এদিন কোহিনূর কেমিক্যাল পৌনে ৯ শতাংশ এবং লিবরা ইনফিউশনসের শেয়ার সোয়া ৬ শতাংশ হারে দর বেড়েছে। সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী, গতকাল উভয় শেয়ারের দর থেকে দরবৃদ্ধির সুযোগ ছিল না। এ ছাড়া খান ব্রাদার্স পিপি, খুলনা প্রিন্টিং, শ্যামপুর সুগার এবং এপেক্স ফুটওয়্যার কোম্পানির শেয়ারদর ৭ থেকে প্রায় ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে ছিল দরবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায়। বিপরীতে প্রায় ৫ শতাংশ দর হারিয়ে এমবি ফার্মা ছিল দরপতনের শীর্ষে। ৪ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ দর হারিয়ে দরপতনে এর পরের অবস্থানে ছিল রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং জেমিনি সি ফুডস।
ডিএসই-আইসিএবি চুক্তি আইপিও প্রক্রিয়ায় শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে আগ্রহী কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন যাচাইয়ের জন্য পেশাদার নিরীক্ষকদের সংগঠন আইসিএবির সঙ্গে ডিএসই একটি সমঝোতা চুক্তি করেছে। এ চুক্তি অনুযায়ী, আইসিএবির ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশন সিস্টেমসে (ডিভিএস) ব্যবহার করতে পারবে ডিএসই। চুক্তিতে ডিএসইর পক্ষে স্বাক্ষর করেন সিআরও খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ এবং আইসিএবির সিইও শুভাশীষ বসু। ঢাকার নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।