নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে আগামীকাল বুধবার থেকে পাহাড়ের তিন দিনের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহুর সূচনা হবে। তাই পাহাড় এখন উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে। বাংলা বর্ষের শেষ দু’দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন এ উৎসব উদযাপন করে আসছে স্মরণাতীত কাল থেকে পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি সম্প্রদায়ের লোকজন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ১১ ভাষাভাষী ১৪টি ক্ষুদ্র পাহাড়ি জাতিসত্তার ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব হচ্ছে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু ও বিহু। উৎসবটি বিভিন্ন নামে উদযাপন করলেও এর নিবেদন একই। মূলত পুরোনো বছরের সব দুঃখ-কষ্ট ও গ্লানি মুছে ফেলে নববর্ষের নব উদ্যোগের শুভ কামনা করাই হলো এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য।
এই উৎসবের প্রথম দিন আগামীকাল বুধবার ফুল বিজুর দিনে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নদীর পানিতে যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ থেকে শিশুরা ফুল ভাসাবেন মা গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে। এদিন ফুল ভাসিয়ে দিয়ে মঙ্গল কামনা করা হবে।
বৃহস্পতিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন মূল বিজুতে ঘরে ঘরে শুধু চলবে পাজন তরকারিসহ নানান সুস্বাদু খাবার পর্ব ও আনন্দ-ফুর্তি।
উৎসবের তৃতীয় দিন শুক্রবার গজ্যাপজ্যা বিজুতে পাহাড়িরা সারাদিন ঘরে বসে বিশ্রামসহ বৌদ্ধমন্দিরে প্রার্থনা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে যত্নসহকারে ভাত খাওয়ানোসহ আশীর্বাদ নেয়। এ দিনকে পাহাড়িরা মনে করে থাকে, সারাদিন আনন্দ আর হাসি-খুশিতে কাটাতে পারলে সারাবছর সুখ-শান্তি ও ধন-দৌলত আহরণের মাধ্যমে কেটে যাবে।
এদিকে শুক্রবার থেকে মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন সুরে সুরে সাংগ্রাই ও জলকেলি উৎসব পালন করবে। সাংগ্রাই উৎসব ঘিরে মারমা সম্প্রদায়ের মানুষ উৎসবের আমেজে মেতে উঠেছে। উৎসবের প্রথম দিনে রয়েছে বৌদ্ধমন্দিরে সমবেত প্রার্থনা, পিঠা তৈরি, ঘিলা খেলা, বৌদ্ধমূর্তি স্থাপন, হাজার প্রদীপ প্রজ্বালন, বয়স্ক পূজা, নিজস্ব ঐতিহ্যবাসী নৃত্য-গানসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে থাকবে ঐতিহ্যবাহী জলকেলি বা মৈত্রী পানি বর্ষণ।
এই মৈত্রী পানি বর্ষণের মাধ্যমে পুরোনে বছরের সব দুঃখ-গ্লানি ধুয়েমুছে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এই জল উৎসবে সমবেত হয় পাহাড়ের মারমা সম্প্রদায়ের মানুষ। ইতোমধ্যে এ উৎসব ঘিরে মারমাপল্লিতে শুরু হয়েছে নানান প্রস্তুতি। পিঠা তৈরি, ঘর সাজানো থেকে শুরু করে নতুন জামা-কাপড় কিনতে স্থানীয় বাজার ও বিপণি বিতানে পড়েছে কেনাকাটার ধুম। ছোট থেকে সব বয়সের মানুষ নিজেকে রাঙিয়ে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। পাড়া-মহল্লায় চলছে পুরোদমে নানান প্রস্তুতি আর উৎসবের আমেজ।