উল্কাবৃষ্টি আর ধূমকেতু দেখা যাবে আজ রাতে

0
27
উল্কাবৃষ্টি

আকাশপ্রেমীদের জন্য সুখবর। বাংলাদেশ থেকেও দেখা যাবে ওরিয়নিড উল্কাবৃষ্টি। এর সঙ্গে দেখা মিলতে পারে আরও দুটি উজ্জ্বল ধূমকেতুর। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই উল্কাবৃষ্টি দেখা যায়। আমেরিকান মেটিওর সোসাইটির জানিয়েছে, এই উল্কাবৃষ্টি সাধারণত ২ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত চললেও ২০ থেকে ২১ অক্টোবর এটি দেখার সেরা সময়।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, এই মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করতে হলে শহর থেকে দূরে ফাঁকা জায়গায় যেতে হবে। কারণ, শহরের আলোকদূষণ অনেক বেশি। তাই শহরের বাইরে কোনো গ্রাম, অন্ধকার কোনো খোলা জায়গা বা নদীর পাড় থেকে ভালোভাবে উল্কাবৃষ্টি দেখা যাবে।

তবে এবার একটা দারুণ সুবিধা হলো উল্কাবৃষ্টির এই সময়টিতে অমাবস্যা থাকছে। অমাবস্যা হলো চাঁদ যখন আকাশে থাকে না, তখন রাতের আকাশ হয় একদম অন্ধকার। আকাশ যত অন্ধকার হবে, ততই উল্কাবৃষ্টির এই বিরল দৃশ্যটি আরও স্পষ্ট এবং সুন্দর করে দেখা যাবে।

হেমন্তকালে যত উল্কাবৃষ্টি দেখা যায়, এর মধ্যে ওরিয়নিড উল্কাবৃষ্টি সবচেয়ে বড় ঘটনা। এটি আকাশে প্রচুর ছোট ছোট উল্কা নিয়ে আসে। মহাকাশে অনেক ভাসমান ধূমকেতু ও গ্রহাণু আছে। যখন এই গ্রহাণু ও ধূমকেতু বা মহাকাশীয় বস্তুর ছোট ছোট টুকরা পৃথিবীর দিকে ছুটে এসে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন ঘর্ষণের ফলে জ্বলে উঠে। এই জ্বলন্ত টুকরোগুলোকেই আমরা উল্কা বলি। আর যখন একসঙ্গে অনেকগুলো উল্কা আকাশে আলোকিত হয়ে ওঠে, তখন সেই দৃশ্যটিকেই বলে উল্কাবৃষ্টি।

এই উল্কাগুলোর জন্ম হয়েছে বিখ্যাত হ্যালির ধূমকেতু থেকে
এই উল্কাগুলোর জন্ম হয়েছে বিখ্যাত হ্যালির ধূমকেতু থেকে, ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

যখন এই উল্কাবৃষ্টি এর সবচেয়ে উজ্জ্বল অবস্থায় পৌঁছায়, তখন প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২০টির মতো উল্কা দেখা যেতে পারে। ওরিয়নিড উল্কাপিণ্ডগুলো খুব দ্রুতগতির। এই উল্কাগুলো সেকেন্ডে প্রায় ৪১ মাইল বা ৬৬ কিলোমিটার প্রচণ্ড গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দিকে ছুটে আসে।

সেই সময় এদের একটি দীর্ঘ আলোর রেখা দেখা যায়। এই উল্কাগুলোর জন্ম হয়েছে বিখ্যাত হ্যালির ধূমকেতু থেকে। ধূমকেতুটি যখন সূর্যের চারপাশে ঘোরে, তখন এর ফেলে যাওয়া ধূলিকণা থেকেই এই উল্কাগুলোর সৃষ্টি হয়। এই ধূমকেতু প্রায় ৭৫ বছর পর পর পৃথিবীর কাছ দিয়ে যায়। এই ধূমকেতুটি সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৮৬ সালে। আর এরপর আবার দেখা যাবে ২০৬১ সালে। হ্যালির ধূমকেতুর কারণেই এপ্রিল মাসে আরও একটি উল্কাবৃষ্টি হয়, যার নাম হলো ইটা অ্যাকোয়ারিড।

যখন পৃথিবী এই ধূমকেতুর ফেলে আসা ধ্বংসাবশেষের বা ধূলিকণার মধ্য দিয়ে যায়, তখন বালির দানার মতো ছোট কণাগুলো আমাদের বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পুড়ে যায়। আর এই কারণেই আমরা আকাশে আলোর রেখা দেখতে পাই। সাধারণত এই উল্কাগুলো কিছুটা ম্লান লাগতে পারে। তবে এগুলো আলোর রেখা তৈরি করে। তবে যে উল্কাপিণ্ডগুলো আকারে একটু বড় হয়, সেগুলো আরও উজ্জ্বল পথ তৈরি করে। মাঝেমধে৵ উল্কাপিণ্ডগুলো শুক্র গ্রহের চেয়েও উজ্জ্বল দেখায়। তখন এদেরকে ‘অগ্নিগোলক’ বলা হয়।

এবারের ওরিয়নিড উল্কাবৃষ্টিকে আরও বিশেষ করেছেন দুটি ধূমকেতু। এরা হলো লেমন (কমেট সি/২০২৫ এ৬) আর সোয়ান (কমেট সি/২০২৫ আর২) নামের ধূমকেতু। গত ১২ সেপ্টেম্বর সোয়ান ধূমকেতুটি প্রথম আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। আর লেমন ধূমকেতুটি চলতি বছরের শুরুতে আবিষ্কৃত হয়।

উল্কাবৃষ্টি দেখার সেরা সময় হলো ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার, মধ্যরাতের পরের ঘণ্টাগুলো। তবে তুমি চাইলে সন্ধ্যা থেকেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারো। এই সময় দুটি ধূমকেতুও দেখা যাবে। সূর্যাস্তের পরেই এরা রাতের আকাশে দেখা দেবে এবং সূর্যাস্তের প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে এদের সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যেতে পারে। সাধারণত এদের দেখতে দুরবিন ব্যবহার করলে ভালো হয়; কিন্তু আকাশ যদি খুব অন্ধকার এবং পরিষ্কার থাকে, তবে তুমি এদের খালি চোখেও দেখতে পারো। তবে ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ, উল্কা কখনো একসঙ্গে দেখা যায় না। একটি দুটি করে দেখতে হয়।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, স্পেস ডটকম, দ্য গার্ডিয়ান, নাসা

আসহাবিল ইয়ামিন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.