তিস্তায় ঘণ্টায় ১ লাখ কিউসেক পানি ছাড়ে ভারত
লালমনিরহাটে তিস্তা ও কুড়িগ্রামে ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ উত্তরের ১৬টি নদনদীর পানি বাড়ছে। পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। তিস্তার গজলডোবা ব্যারাজ দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ ৮৪ হাজার কিউসেক পানি ছেড়েছে ভারত। এখানে ঘণ্টায় এক লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হয়। এতে বন্যার আশঙ্কা করছেন লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পর্যন্ত দেশে বড় বন্যার আশঙ্কা নেই, স্বল্প সময়েই পানি নেমে যাবে।
উজানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় গত কয়েক দিন দেশের উত্তরাঞ্চলের নদনদী থেকে পানি নামতে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি উজানে ভারত অংশে আবার ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সেই পানি আসায় লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই কারণে পানি বেড়েছে ধরলা ও দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ উত্তরের ১৬টি নদনদীতে।
গতকাল সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় বলে জানিয়েছেন ডালিয়া পানি পরিমাপক কর্মকর্তা নূর ইসলাম। এতে ব্যারাজের ভাটিতে থাকা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী চরাঞ্চল ও দ্বীপচর তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। পানি নিয়ন্ত্রণে হাতীবান্ধার দোয়ানীতে দেশের সর্ববৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
কুড়িগ্রামে পাউবোর কর্মকর্তারা জানান, গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়, তবে তা বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হয়। ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি একই অবস্থায় ছিল। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে দ্রুত কুড়িগ্রামের প্রধান সব নদনদীর পানি বাড়ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। জেলায় ১ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৬৫০ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের প্রধান কয়েকটি সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভারত থেকে আসা পানির ঢলে এ এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতকে আগে থেকেই পানির প্রবাহ বিপৎসীমার ওপরে ছিল। নদীর পানি বাড়লেও এখানে বন্যার শঙ্কা নেই। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশে এখনও বন্যা আসেনি। আগামী ৫-৭ দিনের পূর্বাভাস বড় বন্যার শঙ্কা নেই। তিস্তা ও দুধকুমারে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। দ্রুতই ওই পানি নেমে যেতে পারে। আগামী তিন দিন খুব বেশি বৃষ্টিও হবে না। তবে ভারত গজলডোবা ব্যারাজ খুলে দেওয়ার কারণে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারীসহ আশপাশের জেলাগুলো প্লাবিত হতে পারে।
তিনি বলেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার মাসে আমাদের দেশে বন্যার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। পানি বাড়লে ভারত ব্যারাজ খুলে দেয়। বাংলাদেশও খুলে দেয়। এ পানি ধরে রাখারও সুযোগ নেই। কারণ, ব্যারাজ পানি আটকানোর মতো কোনো বাঁধ নয়। তবে ভারত হঠাৎ করে ব্যারাজ খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিতে পারে না। তাই এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান বাড়াতে হবে। এতে মানুষের ক্ষতি কিছুটা কমতে পারে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন কলকাতা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি]