ইরানের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ করে রাখার ক্ষতিপূরণ দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতটির রায়ে বলা হয়েছে, ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ জব্দ করতে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতগুলোকে অবৈধভাবে অনুমোদন দিয়েছিল ওয়াশিংটন।
আইসিজে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত। এটি ‘বিশ্ব আদালত’ (ওয়ার্ল্ড কোর্ট) নামেও পরিচিত। গতকালের রায়ে ইরানের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হলেও ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। বিষয়টি পরে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আদালতটি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সিটি ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১৭৫ কোটি ডলারের সম্পদও জব্দ করে রেখেছে মার্কিন সরকার। ওই অর্থ চেয়েও আইসিজের কাছে আবেদন করেছিল তেহরান। তবে আদালত জানিয়েছেন, গতকাল দেওয়া রায়ের আওতায় ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই অর্থ পড়বে না।
১৯৫৫ সালে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি বন্ধুত্ব চুক্তি হয়েছিল। সম্পদ জব্দের মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন ওই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে—এমন অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালে আইসিজেতে মামলা করে তেহরান। এরপর থেকে মামলাটির শুনানি চলছিল।
গত বছর শুনানিতে ওই মামলা খারিজের আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তাদের দাবি ছিল, তেহরান ‘অবৈধ কর্মকাণ্ডে’ জড়িত। ‘সন্ত্রাসবাদের’ পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এই অর্থ ১৯৮৩ সালে লেবাননে বোমা হামলা ও ইরানের সংশ্লিষ্টতায় অন্যান্য হামলার ভুক্তিভোগীদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে। আইসিজের রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের এ দাবি খারিজ করা হয়েছে।
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত হয়। এর আগে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সরকার ছিল। বিপ্লবের পর ইরানে নতুন সরকার ক্ষমতায় বসে। তখন থেকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈরী সম্পর্কের সূত্রপাত। পরে ২০১৮ সালে এসে বন্ধুত্ব চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় ওয়াশিংটন।
আইসিজের রায়ে বলা হয়েছে, ইরানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দের সময় দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব চুক্তি বলবৎ ছিল। ফলে সম্পদ জব্দ করে ওয়াশিংটন ওই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তবে সিটি ব্যাংকে জব্দ থাকা ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ রায়ের আওতায় পড়বে না। কারণ, ওই সম্পদ বন্ধুত্ব চুক্তি দিয়ে সুরক্ষিত ছিল না।
রায় ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আইসিজের রায়ে ইরানের অবস্থানে ‘বৈধতা’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবৈধ’ আচরণের বিষয়টি উঠে এসেছে। অপরদিকে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জব্দ করা সম্পদ নিয়ে রায় নিজেদের পক্ষে যাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাদের ‘বড় জয়’ হয়েছে।