ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন ট্রাম্প: সিবিএসের প্রতিবেদন

0
17
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (বাঁয়ে) ও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি, ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। তবে দেশটিতে হামলার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসের প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।

গোপন এক গোয়েন্দা সূত্র সিবিএসকে জানিয়েছে, ট্রাম্প এখনই হামলা শুরু করতে চান না। তিনি চাইছেন, ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করে দিক। তিনি ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনা ফর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে হামলার বিষয়টি বিবেচনা করছেন।

এরই মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ট্রাম্পের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের’ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর ধৈর্যের সীমা ফুরিয়ে গেছে।

ইরানে হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল বুধবার ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এটা করতেও পারি, না–ও করতে পারি।’

আয়াতুল্লাহ খামেনি গতকাল তাঁর ধারণ করা এক ভাষণে ট্রাম্পের বক্তব্যের কড়া জবাব দেন। বলেন, ‘যেকোনো মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের খেসারত দিতে হবে। ইরানি জাতি কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না।’

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার এই প্রত্যাখ্যানকে গুরুত্ব না দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শুভকামনা রইল’। তবে তিনি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ‘আমি কী করব, সেটা কেউ জানে না।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, এর অর্থ হচ্ছে আমার ধৈর্য শেষ।’

ট্রাম্পের ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদনের খবর প্রথম প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

ইসরায়েল ইরানে নতুন করে হামলা করেছে, যার লক্ষ্য ছিল ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক স্থাপনা। জবাবে ইরান হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে জানায়। অবশ্য ইসরায়েল দাবি করেছে, এতে তাদের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

গত শুক্রবার ভোরে ইরানে ইসরায়েলের আগ্রাসনের পর গতকাল খামেনি প্রথম প্রকাশ্য বক্তব্য দেন।

জাতিসংঘে ইরানের প্রতিনিধি এক্সে ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে লেখেন, জোরাজুরি করলে ইরান কখনো আলোচনায় বসে না। জোর করে শান্তি আনা যায়—ইরান এমনটা বিশ্বাস করে না। আর আলোচনা অবশ্যই এমন এক ‘যুদ্ধবাজের’ সঙ্গে নয়, যিনি নিজের গুরুত্ব টিকিয়ে রাখতে মরিয়া।

ইরানের প্রতিনিধি আরও লেখেন, ইরানের কোনো কর্মকর্তা কখনো হোয়াইট হাউসের দরজায় গিয়ে মাথা নত করে অনুরোধ জানাননি।

এই প্রতিনিধি বলেন, ট্রাম্পের মিথ্যাচারের চেয়েও ঘৃণিত হচ্ছে তাঁর কাপুরুষোচিত হুমকি, যাতে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে ‘হত্যার’ কথা বলেন।

এই বাগ্‌যুদ্ধের মধ্যেই দেখা গেছে, লাখ লাখ ইরানি রাজধানী তেহরান ছেড়ে যেতে সড়কে বেরিয়ে পড়েছেন। এই শহরে প্রায় এক কোটি মানুষ বসবাস করেন।

ইসরায়েলের উগ্রবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেছেন, তাঁর দেশের সেনাবাহিনী ‘ধাপে ধাপে’ ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি নির্মূল করার পথে এগোচ্ছে।

এই উগ্র ইহুদিবাদী নেতা দাবি করেন, ‘আমরা তেহরানের আকাশ নিয়ন্ত্রণ করছি। আমরা আয়াতুল্লাহদের শাসনের ওপর প্রবল শক্তি দিয়ে আঘাত হানছি। পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র, সদর দপ্তর ও শাসকের প্রতীকগুলোকে নিশানা করছি।’

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সিনেট কমিটিকে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেকোনো সময় যেকোনো নির্দেশ দিলে প্রতিরক্ষা বাহিনী তা বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত।

হেগসেথের এই মন্তব্য এমন সময়ে এল, যখন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি জড়ো হচ্ছে। ইউএসএস নিমিৎসের নেতৃত্বাধীন বিমানবাহী একটি রণতরি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে উপসাগরীয় অঞ্চলে যাচ্ছে। সেখানে আগে থেকে মোতায়েন ইউএসএস কার্ল ভিনসনের সঙ্গে এই রণতরি যোগ দেবে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অন্যান্য সামরিক বিমান, জ্বালানি ট্যাংকারও ইউরোপ থেকে স্থানান্তরিত হচ্ছে, যার মধ্যে এফ–২২ এবং এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আগামী বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে বৈঠক করবেন। আলোচনার মূল বিষয় হবে ইরান।

বিবিসি জানতে পেরেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলার জন্য ডিয়েগো গার্সিয়া বা সাইপ্রাসে যুক্তরাজ্যের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করতে চায়—এমন কোনো কিছু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাজ্যকে জানায়নি।

সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র যদি এসব ঘাঁটি থেকে হামলা চালাতে চায়, তবে আগেই তারা মিত্রদেশকে জানায়। যুক্তরাজ্যের একটি সূত্র জানিয়েছে, সব বিকল্প বিবেচনায় রয়েছে। তবে মার্কিন পরিকল্পনা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।

গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের জেরুজালেম দূতাবাস সেখানে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। কতজন মার্কিন নাগরিক ইসরায়েল ছাড়তে চান, কিংবা মার্কিন সেনাবাহিনী তাঁদের সরিয়ে নিতে সাহায্য করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

বিবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.