
ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে নতুন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইরানের ইসলামি রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) সংশ্লিষ্ট বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ এজেন্সি একটি পারমাণবিক স্থাপনার কাছে বিস্ফোরণ হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে। অপর দিকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, তারা এখনো ইরানের ড্রোন অবকাঠামো ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণব্যবস্থা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফার্স নিউজের খবরে বলা হয়েছে, কিছুক্ষণ আগে ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রের কাছে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রটি তেহরানের দক্ষিণে এবং কেন্দ্রীয় শহর কোম থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এটি ভূগর্ভের প্রায় গভীরে ১০০ মিটার অবস্থিত। এর আগে এলাকাটিতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনার খবর জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা পূর্ণ শক্তি এবং সর্বোচ্চ গতিতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হয়।’
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরানের পশ্চিমাঞ্চলসহ একাধিক এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, আজ শুক্রবার দ্বিতীয়বারের মতো তেহরানে হামলা হয়েছে।
শুক্রবার ভোররাতে ইরানে প্রথম দফা হামলার প্রায় ১২ ঘণ্টা পর ইসরায়েল নতুন করে হামলা চালিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে।
তবে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এসব ভিডিও বা বিস্ফোরণের সংবাদ প্রচার করছে না; বরং টিভি চ্যানেলগুলোতে একের পর এক সরকারি কর্মকর্তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা প্রচার করা হচ্ছে।
তেহরানের কাছে নতুন বিমান হামলার একটি ভিডিও যাচাই করেছে বিবিসি। এতে বলা হয়েছে, ‘আমরা এমন একটি ভিডিও যাচাই করেছি, যাতে ইরানের রাজধানী তেহরানের কাছে নতুন এক বিমান হামলার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।’
ভিডিওটি শহরের পশ্চিম দিক থেকে ধারণ করা হয়েছে। দূরে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে এবং সূর্য পশ্চিমে, এর অর্থ হলো এটি সন্ধ্যায় ধারণ করা।
বিবিসির একজন কর্মী ভিডিওর অডিও অনুবাদ করেছেন। এতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা গেছে, ‘এই মুহূর্তে স্থানীয় সময় ৬টা ৩২ মিনিটে। এটি গার্মদারেহ…এখন আমি বিস্ফোরণের শব্দ শুনছি এবং ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে।’
আজ ভোররাতে ইরানের পরমাণু স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানা ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসস্থলও হামলায় নিশানা করা হয়েছিল।
ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসির প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, আইআরজিসির বিমানবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহসহ অন্তত ২০ জন কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এ হামলায় সব মিলিয়ে অন্তত ৭৮ জনের প্রাণহানি এবং তিন শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
ইসরায়েল জানিয়েছে, ২০০ যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানের বিভিন্ন শহরের শতাধিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
হামলার জবাবে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান ১০০টির মতো ড্রোন নিক্ষেপ করে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় সব ড্রোনই ইসরায়েলে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগে ধ্বংস করা হয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি শক্ত জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান নিহত প্রত্যেক নাগরিকের রক্তের প্রতিশোধ নেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আকাশ ও নৌবাহিনীর সমন্বয়ে তারা ইরান থেকে উৎক্ষেপণ করা ড্রোন মাঝপথেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।
ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথে লক্ষ্যভ্রষ্ট করা হয়েছে হয়েছে বলেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
আল জাজিরা