ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড ডাকছে এই ব্রাজিলিয়ানকে

0
23
ফ্লুমিনেন্স গোলকিপার ফাবিও। পরশু রাতে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ম্যাচে, এএফপি

১৯৯৭ ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ। সেবার ঘানাকে হারিয়ে ছোটদের এই বিশ্বকাপ প্রথম জিতেছিল ব্রাজিল। কার্লোস সিজার রামোসের সেই দলে ছিলেন রোনালদিনিও, জিওভান্নি, ফাবিও সান্তোস, ফাবিও পিন্তোরা। শুধু রোনালদিনিও-ই এই দল থেকে পরে বড় মাপের তারকা হয়েছেন। অন্যরা সেভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি—কথাটি ঠিক আবার ভুলও!

ব্রাজিলের সেই অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপজয়ী দলের একজন এখনো খেলে যাচ্ছেন। বয়স তাঁকে ৪৪ বছরে নিয়ে এসে দাঁড় করালেও গ্লাভসজোড়া তুলে রাখার যেন কোনো ইচ্ছাই তাঁর নেই। বরং তারকা না হয়েও এ বয়সে তাঁর ম্যাচ খেলার পরিসংখ্যান দেখলে কুঁড়ি-পঁচিশের ফুটবলাররাও চমকে যেতে পারেন। ২০২২ সাল থেকে ফ্লুমিনেন্সের হয়ে এ পর্যন্ত ২২২ ম্যাচ তিনি খেলেছেন! আগের তিনটি মৌসুমের একেকটিতে ৬০টির বেশি ম্যাচ খেলেছেন। এ মৌসুমে সংখ্যাটা একটু কমে এখন পর্যন্ত ৩৫।

নাম তাঁর ফাবিও দেভিসন লোপেজ মাসিয়েল। ব্রাজিলিয়ান লিগ কিংবা ক্লাব বিশ্বকাপে চোখ রাখলে শুধু ‘ফাবিও’ নামে তাঁকে চিনতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ক্লাব বিশ্বকাপে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় ফাবিও। যদিও ফ্লুমিনেন্স–সমর্থকেরা তাঁর এ পরিচয়ে আপত্তি তুলতে পারেন। ফাবিও ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটির গোলকিপার, সেটাও যেনতেন গোলকিপার নন; এই তো মাত্র পাঁচ দিন আগে গ্রুপ পর্বে পাচুকার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে দারুণ এক রেকর্ড গড়েন ফাবিও। ইতালিয়ান কিংবদন্তি জিয়ানলুইজি বুফনকে পেছনে ফেলে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে (৫০৭) ক্লিনশিট রাখার রেকর্ড গড়েন।

৪৪ বছর বয়সেও পোস্টের নিচের নিয়মিত দেখা যায় ফাবিওকে
৪৪ বছর বয়সেও পোস্টের নিচের নিয়মিত দেখা যায় ফাবিওকে, এএফপি

এখন সংখ্যাটা ৫০৮। ক্লাব বিশ্বকাপেই পরশু রাতে শেষ ষোলোয় ইন্টার মিলানকে ২-০ গোলে হারায় ফ্লুমিনেন্সে। এই ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটির ক্লিনশিট রাখার পেছনে ফাবিওর অবদান—চারটি দারুণ সেভ করেছেন। এর মধ্যে শেষ দিকে পা দিয়ে করা সেভটি ছিল অবিশ্বাস্য। যুক্তরাষ্ট্রে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৪৪ বছর বয়সী এই গোলকিপারের এমন পারফরম্যান্সও তো অবিশ্বাস্য।

যেমনটি অবিশ্বাস্য তাঁর মূল দলের হয়ে ম্যাচ খেলার পরিসংখ্যানও। ১৩৭৮ ম্যাচ! ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটি এখন ফাবিওর নাগালে।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি পিটার শিলটনের। ফাবিওর মতো তিনিও গোলকিপার। পেশাদার ক্যারিয়ারে ১৩৯০ ম্যাচ খেলেছেন শিলটন। যদিও শিলটনের দাবি, ১৩৮৭টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন, যেটা লেখা আছে তাঁর এক্স হ্যান্ডলে।
তাই প্রশ্ন জাগে, ফাবিও আসলে শিলটনের ম্যাচ খেলার কোন সংখ্যাটির পিছু ধাওয়া করছেন?

শীর্ষ খেলোয়াড়দের তালিকা

ক্লাব ক্যারিয়ারে শিলটন খেলেছেন ১২৪৯ ম্যাচ। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন রেকর্ড ১২৫ ম্যাচ। সব মিলিয়ে তাঁর ম্যাচ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৭৪। এই হিসাবে ব্রাজিলে গোটা ক্লাব ক্যারিয়ার কাটানো ও জাতীয় দলে কখনো সুযোগ না পাওয়া ফাবিও তো আগেই শিলটনকে পেছনে ফেলেছেন!

ইংল্যান্ড ফুটবল অনলাইনের সূত্র মারফত বিবিসি জানিয়েছে, ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে ১৩ ম্যাচ খেলেছিলেন শিলটন। এই ম্যাচ সংখ্যা যোগ করলে শিলটনের মোট ম্যাচসংখ্যা হয় ১৩৮৭, যেটা তিনি নিজে দাবি করেন।

শিলটন আসলে কত ম্যাচ খেলেছেন সেটা যেমন তর্কসাপেক্ষ, তেমনি অনূর্ধ্ব-২৩ দলে তাঁর খেলা ম্যাচগুলো সিনিয়র দলের পরিসংখ্যানে যোগ হবে কি না, সেটা নিয়েও তর্ক হতে পারে।

তবে রেকর্ড যেটাই হোক, ১৩৯০ কিংবা ১৩৮৭—ফাবিওর জন্য সেটা পেছনে ফেলা এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার। আগামী সেপ্টেম্বরে ফাবিও ৪৫ বছরে পা রাখবেন, কিন্তু গত মে মাসে ২০২৬ পর্যন্ত ফ্লুমিনেন্সের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছেন। অর্থাৎ শিলটনের রেকর্ডটি ফাবিওর দখলে আসা শুধুই সময়ের ব্যাপার। তবে রেকর্ডটি কত দিন দখলে রাখতে পারবেন, সেটা একটা প্রশ্ন।

ইংল্যান্ডের সাবেক গোলকিপার পিটার শিলটন
ইংল্যান্ডের সাবেক গোলকিপার পিটার শিলটন, শিলটনের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যে ফাবিওর পিছু ধাওয়া করছেন। ৪০ বছর বয়সী পর্তুগিজ কিংবদন্তি ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ১২৮৬টি অফিশিয়াল ম্যাচ খেলেছেন।

কিছুদিন আগেই আল নাসরের সঙ্গে দুই বছরের নতুন চুক্তি করেছেন রোনালদো। খেলার ইচ্ছা আছে ২০২৬ বিশ্বকাপেও। অর্থাৎ ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ গোলের (১০০০ গোল হতে চাই আরও ৬২ গোল) পাশাপাশি সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়ার সুযোগ আছে রোনালদোরও।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.