যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে একে পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ আলোচনার বিষয়ে জ্ঞাত দুটি সূত্র গত শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এ উদ্যোগ কার্যকর হলে তা বৈদেশিক সাহায্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের একটি উল্লেখযোগ্য নীতির পরিবর্তন হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এ সপ্তাহে ইউএসএআইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা করেছে বলে একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা এ আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেননি।
ট্রাম্প প্রশাসন গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা বন্ধের নির্দেশ দেয়। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী কয়েক বিলিয়ন ডলারের এ ধরনের বৈদেশিক সহায়তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং করদাতাদের অর্থের অপচয় কি না, তা নিশ্চিত হতে পর্যালোচনা করে দেখা হবে।
একটি সূত্র বলেছে, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে আইনি দিকগুলো দেখা হচ্ছে, যাতে ট্রাম্প তাঁর নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ইউএসএআইডির স্বাধীনতা বন্ধ করতে পারেন। তিনি শনিবার নাগাদ এ-সংক্রান্ত আদেশে সই করতে পারেন। তবে কংগ্রেসকে এড়িয়ে ইউএসএআইডিকে পররাষ্ট্র দপ্তরে একীভূত করার নির্দেশ দেওয়ার আইনি কর্তৃত্ব ট্রাম্পের আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
সিনেটের বিরোধীদলীয় নেতা চাক শুমার একটি গুঞ্জন উল্লেখ করে বলেন, ট্রাম্প ইউএসএআইডিকে স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এক্সে করা এক পোস্টে চাক শুমার বলেন, এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিলে তা হবে অবৈধ ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।
এ বিষয়ে ইউএসএআইডি ও হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
সূত্র বলছে, ট্রাম্পের নতুন করে গঠিত সরকারি দক্ষতাবিষয়ক দপ্তরের নেতৃত্বে থাকা ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক এ আলোচনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি এ সপ্তাহে কয়েক দফা ওয়াশিংটনে ইউএসএআইডির কার্যালয়ে এসেছেন।
গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে ট্রাম্প একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। এর আগে ২০১৬ সালে তাঁর প্রথম মেয়াদে তাঁর বিরোধিতাকারী ফেডারেল আমলাতন্ত্রকে পুনর্গঠন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।
যদি ইউএসএআইডিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে রাখা হয়, তবে বিশ্বের বৃহত্তম একক এ দাতা সংস্থার কাছ থেকে বিশ্বব্যাপী জীবন রক্ষাকারী যে সাহায্য পাওয়া যায়, তাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করবে। ইউএসএআইডির কাজকর্ম সম্পর্কে জানে এমন একটি সূত্র জানিয়েছে, এ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সংস্থাটির মানবিক কার্যক্রমের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
ইউএসএআইডি অতীতে ইরানসহ যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, তাদেরও সেতু নির্মাণের মতো নানা উন্নয়নকাজে সহায়তা করতে সক্ষম হয়েছে। এখন যদি এর কার্যক্রম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তবে এ ধরনের সুবিধাগুলো নষ্ট হবে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা সফল হলে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক সৃষ্ট ইউএসএআইডি প্রশাসকের পদটি বাতিল হয়ে যাবে।
রয়টার্স,ওয়াশিংটন