দ্বিতীয় দফায় মার্কিন মসনদে বসে নানা ইস্যুতে তোলপাড় শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুরুতে তিন মাসের জন্য ইউএসএআইডি এর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। তারপর এটিকে অপরাধী সংস্থা হিসেবে অভিহিত করেন ট্রাম্প ২.০ প্রশাসনের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক।
এর পরপরই বন্ধ করা হয় ইউসএআইডি’র কার্যক্রম। নির্দেশনা দেয়া হয়, ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সারা বিশ্বে থাকা কর্মকর্তাদের ওয়াশিংটনে ফেরার। গত বৃহস্পতিবার শেষ অফিস করে তাই ঢাকা ছাড়তে হয়েছে সংস্থাটির অর্ধ শতাধিক মার্কিন কর্মকর্তাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই উন্নয়ন সংস্থা বন্ধের ঘটনায় দেশে বেকার হয়ে পড়ছেন লাখও মানুষ। এর ফলে কেবল এনজিও খাত নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
গত বছরও বাংলাদেশে ৯৬টি প্রকল্পে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে ইউএসএআইডি। এর বেশিরভাগই খরচ হয়েছে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নের মতো প্রকল্পে। নিজস্ব তিন শতাধিক কর্মকর্তা থাকলেও স্থানীয় এনজিও ও বিভিন্ন সংস্থার কয়েক হাজার কর্মী সরাসরি যুক্ত এসব প্রকল্পে। ইউএসএআইডি’র অর্থায়ন বন্ধ হওয়ায় সেসব প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের জীবন-জীবিকা চরম অনিশ্চয়তায়।
আইএনজিও ফোরাম বাংলাদেশের আহ্বায়ক হাসিন জাহান বললেন, কর্মক্ষেত্রে এখানে একটা বিশাল প্রভাব পড়বে। কারণ প্রচুর মানুষ এটার সাথে সম্পৃক্ত ছিল এবং বিভিন্ন স্তরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা যদি করি, তাদের ওপর বড় একটি প্রভাব পড়বে। তারা পর্যাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষ খাত থেকে অনেক নারী একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে ছিল, তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
কেবল কর্মসংস্থানই নয়, ট্রাম্প প্রশাসনের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়তে পারে শিশু স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো মৌলিক ইস্যুতেও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, কর্মী এবং উপকারভোগী মানুষের জীবনযাত্রা, জীবনযাপন এবং তাদের সামাজিক মর্যাদার কথা যদি বিবেচনা করি, এ রকম তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক এই সিদ্ধান্তে চিন্তিত সরকারও। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের বা অন্য দেশের সেখানে কিছুই করার নেই আসলে। আমাদেরকে সেই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে। বিকল্প উপায় বের করতে হবে যে আমাদের কার্যক্রমগুলো কীভাবে চলবে। সব কার্যক্রম সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যাবে এমন কোনও কথা না।
বাংলাদেশে মা ও শিশু মৃত্যুহার কমানো, কৃষি উৎপাদন কাঙ্কিত মাত্রায় নিয়ে যাওয়া, দুর্যোগ মোকাবেলায় সাফল্য থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ও কৃষি গবেষণায় ইউএসএআইডি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ডিজিটালাইজেশনসহ আইসিটি খাত, এমনকি শিশুদের ভীষণ পছন্দের সিসিমপুরেও তাদের অর্থায়ন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় ফাইজার ও মর্ডানার যে কয়েক কোটি টিকা এসেছিল দেশে, তা-ও ছিল ইউএসএআইডি’র উপহার।
মাহফুজ মিশু