র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর অবস্থান হারানো, আর্জেন্টিনার জন্য এটা দুঃসংবাদ তো বটেই। তবে চাইলে আর্জেন্টাইন–সমর্থকেরা এটাকে ‘সুখবর’ হিসেবেও মনে করতে পারেন। কেন? সেই ব্যাখ্যা দেওয়ার আগে চলুন জানা যাক আর্জেন্টিনা কেন ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান হারাচ্ছে।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নিজদের শেষ ম্যাচটায় বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে ইকুয়েডরের কাছে ১-০ গোলে হেরে গেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে এটা লিওনেল স্কালোনির নবম হার। তবে এতে খুব একটা ক্ষতি হয়নি তাঁর দলের। কারণ, ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট অনেক আগেই নিশ্চিত করে রেখেছিলেন তাঁরা। এ ম্যাচটা তাই আর্জেন্টিনার জন্য ছিল নিয়মরক্ষার।
কিন্তু কিটোতে এই ম্যাচে হার প্রভাব ফেলছে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে আর্জেন্টিনার অবস্থানে। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল আর্জেন্টিনা। বর্তমান তাদের পয়েন্ট ১৮৮৫.৩৬। ১৮৬৭.০৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে স্পেন ও ১৮৬২.০৩ পয়েন্ট নিয়ে তিনে ফ্রান্স।

বর্তমান এই র্যাঙ্কিংয়ের মেয়াদ ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ফিফার ওয়েবসাইট অনুসারে, ১৮ সেপ্টেম্বর নতুন র্যাঙ্কিং প্রকাশ করা হবে। হিসাব বলছে, নতুন সেই র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকবে না আর্জেন্টিনা। টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে চলে আসবে স্পেন, দুই নম্বরে আসবে ফ্রান্স। তৃতীয় স্থানে নেমে যাবে লিওনেল স্কালোনির দল। ১১ বছর পর আবারও ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ফিরছে স্পেন, সর্বশেষ তাদের এক নম্বরে দেখা গিয়েছিল ২০১৪ বিশ্বকাপের আগে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আবারও সেই স্বাদ মিলছে লা রোহাদের, আর এর পেছনে বড় ভূমিকা ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তাদের দারুণ পারফরম্যান্স। স্পেন সম্প্রতি বুলগেরিয়াকে উড়িয়ে দিয়েছে ৩–০ গোলে, তুরস্ককে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ৬–০ গোলে।
কীভাবে হয় র্যাঙ্কিংয়ে পয়েন্টের হিসাব
শুধু নিজের জয়ে নয়, কিছুটা ভাগ্যের জোরেও সামনে এগিয়েছে স্পেন। কারণ, হোঁচট খেয়েছে আর্জেন্টিনা।
ফিফার এই র্যাঙ্কিং করা হয়েছে ‘এলো রেটিং’ (elo)–এর ভিত্তিতে। হাঙ্গেরিতে জন্ম নেওয়া দাবাড়ু ও পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক আরপাদ এলো এই পদ্ধতির আবিষ্কারক। দলগুলোর বর্তমান পারফরম্যান্স এই পদ্ধতিতে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। বড় টুর্নামেন্টে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জয়ের গুরুত্ব বেশি এই র্যাঙ্কিং পদ্ধতিতে।
ব্রাজিল যেমন শীর্ষে থেকে ২০২২ বিশ্বকাপে গিয়ে বাদ পড়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। ২০১৪ বিশ্বকাপে ১ নম্বর দল হিসেবে গিয়েছিল স্পেন, বাদ পড়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকে। ২০১৮ বিশ্বকাপে এক নম্বর দল হিসেবে গিয়েছিল জার্মানি, বাদ পড়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকে।
কোনো দল যদি র্যাঙ্কিংয়ে তাদের চেয়ে এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষকে হারায়, তাহলে র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা প্রতিপক্ষকে হারানোর তুলনায় বেশি পয়েন্ট পাবে।
ইকুয়েডরের বিপক্ষে হারে তাই পয়েন্ট হারাবে আর্জেন্টিনা। আগের ম্যাচে ভেনেজুয়েলাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে তাই র্যাঙ্কিংয়ে খুব বেশি লাভ হয়নি আর্জেন্টিনার। কারণ, ভেনেজুয়েলা (৪৬তম, পয়েন্ট ১৪৭৭.০২) র্যাঙ্কিংয়ে আর্জেন্টিনার তুলনায় পিছিয়ে থাকা দল। ১৫৭০.৬৮ পয়েন্ট নিয়ে ইকুয়েডর র্যাঙ্কিংয়ে ২৩তম। পরবর্তী র্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান আরও ভালো হবে এবং পয়েন্টও যোগ হবে। কারণ, তারা র্যাঙ্কিংয়ে তুলনামূলক শ্রেয়তর দল আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছে। স্পেন ও ফ্রান্স সেপ্টেম্বরে নিজেদের দুই ম্যাচই জিতেছে এবং আর্জেন্টিনা তাদের দুই ম্যাচের একটিতে জিতেছে, অন্যটি হেরেছে। আর্জেন্টিনা তাই পয়েন্ট হারাবে এবং স্পেন ও ফ্রান্সের নামের পাশে পয়েন্ট যোগ হবে।
আর্জেন্টিনার জন্য এটা ‘সুখবর’ কীভাবে
র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান হারানোটা অন্য ভাবে দেখলে কিছুটা স্বস্তিই দেবে আর্জেন্টাইন–সমর্থকদের। কেন? প্রচলিত একটা কুসংস্কার হচ্ছে, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে দলটা কখনো বিশ্বকাপ জিততে পারে না। এর পেছনে অনেক বাস্তব উদাহরণও আছে।
ব্রাজিল যেমন শীর্ষে থেকে ২০২২ বিশ্বকাপে গিয়ে বাদ পড়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। ২০১৪ বিশ্বকাপে ১ নম্বর দল হিসেবে গিয়েছিল স্পেন, বাদ পড়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকে। ২০১৮ বিশ্বকাপে এক নম্বর দল হিসেবে গিয়েছিল জার্মানি, বাদ পড়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকে। এ রকম আরও উদাহরণ আছে। র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর স্থান হারানোটা তাই আর্জেন্টিনার জন্য সুখবর বলাই যায়।

অবশ্য বিশ্বকাপের আগে আর্জেন্টিনা আরও কিছু প্রীতি ম্যাচ খেলবে। এর মধ্যে অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে ভেনেজুয়েলা ও পুয়ের্তো রিকোর বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের কথা লিখেছে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম। তবে সে সময় ইউরোপিয়ান দলগুলোর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচও থাকবে। প্রীতি ম্যাচের তুলনায় বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ বেশি মূল্যবান—সে কারণে জিতলে ইউরোপের দলগুলো পয়েন্টও পাবে প্রীতি ম্যাচে জয়ের চেয়ে বেশি। আর্জেন্টিনার জন্য তাই আবার শীর্ষে যাওয়াটা একটু কঠিনই।