আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বৈঠক ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে: এরদোয়ান

0
20
গাজা যুদ্ধ নিয়ে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পছবি: আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠকের ফলাফলে তিনি ‘সন্তুষ্ট’।

বৈঠকের ফলাফল নিয়ে ট্রাম্পও ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, গতকাল মঙ্গলবার নিউইয়র্কে ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ‘ইসরায়েল ছাড়া সব শক্তিধর দেশের’ সঙ্গে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক ‘সফল’ হয়েছে।

যদিও গাজা সিটিতে ইসরায়েল এখনো ক্রমাগত বোমাবর্ষণ করে চলেছে। সেখানে প্রতিদিন ডজন ডজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং হাজার হাজার মানুষকে জোরপূর্বক অজানা ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

তবে এখন পর্যন্ত বৈঠকের কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। বৈঠকে মিসর, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নেতারা অংশ নেন। ট্রাম্প এই বৈঠক সম্পর্কে বলেছেন, ‘এ–ই সেই দল, যারা সমস্যার সমাধান করতে পারে।’

এখন পর্যন্ত বৈঠকের কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। বৈঠকে মিসর, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতারা অংশ নেন। ট্রাম্প এই বৈঠক সম্পর্কে বলেছেন, ‘এ-ই সেই দল, যারা সমস্যার সমাধান করতে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানায়, ধারণা করা হচ্ছিল, ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়ে একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন। তিনি চান আরব ও মুসলিম দেশগুলো গাজায় সেনা পাঠাতে সম্মত হোক। এতে ইসরায়েল সেখান থেকে সরে যেতে পারবে এবং এ উপত্যকার পুনর্গঠন ও বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য অর্থ জোগাড় করা সম্ভব হবে।

আমিরাতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ডব্লিউএএম আজ বুধবার জানিয়েছে, বৈঠকের আলোচনার মূল বিষয় ছিল গাজার যুদ্ধ বন্ধ করে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা। এ ছাড়া গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি ও তীব্র মানবিক সংকট মোকাবিলা করাও অগ্রাধিকারে ছিল।

এ আলোচনার পরিকল্পনার সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানা গেছে। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। বৈঠকে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত রাখার কথা ভাবা হয়েছে। যদিও ইসরায়েল আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা এটি মানবে না।

পরিকল্পনায় হামাসেরও কোনো ভূমিকা নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল দাবি করছে, হামাসকে অবশ্যই নিরস্ত্র ও নির্মূল করতে হবে।

ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র পাওয়া ‘পুরস্কার নয়, অধিকার’।

আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ মহাসচিব

‘যে এক ব্যক্তি সবকিছু বদলাতে পারেন’

ট্রাম্প সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে এমন সময় বৈঠক করলেন, যখন গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে। সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঢেউ উঠেছে এবং গাজার দুই বছরের যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার দাবি জোরালো হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ৩৮২ জন নিহত হয়েছেন।

এই সম্মেলনে দেখা গেছে, ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার কূটনৈতিক ঢাল হিসেবে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্র ক্রমেই একা হয়ে পড়ছে। অন্য দেশগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমালোচনা করেছে। তেল আবিবকে যুদ্ধ বন্ধে চাপ দেওয়ার কোনো ইঙ্গিতও দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্প সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দীর্ঘ বক্তৃতায় বলেন, ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগালসহ অন্য দেশগুলোর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হামাসকে ‘ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পুরস্কার’ দেওয়ার মতো এবং এতে যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হবে। তিনি যুদ্ধের ‘তাত্ক্ষণিক’ সমাপ্তির আহ্বান জানান। তবে গাজার ভয়ানক মানবিক সংকটের কথা উল্লেখ করেননি।

ট্রাম্পের এ বক্তব্য জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের দেওয়া বক্তব্যের বিপরীত। গুতেরেস রোববার বলেন, ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র পাওয়া ‘পুরস্কার নয়, অধিকার’।

ট্রাম্প সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে এমন সময় বৈঠক করলেন, যখন গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে। সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঢেউ উঠেছে এবং গাজার দুই বছরের যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার দাবি জোরালো হয়েছে।

আল–জাজিরার কূটনৈতিক সম্পাদক জেমস বেস নিউইয়র্ক থেকে জানান, জাতিসংঘের কূটনীতিকদের ধারণা, হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায়ই শুধু একপক্ষের কথা শুনছেন। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের একজন সমর্থক আছে, একজনই অর্থ দিচ্ছে, একজনই অস্ত্র দিচ্ছে এবং সেই সমর্থক হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই মূল মানুষ, যিনি সবকিছু বদলাতে পারেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প।’

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে গত সোমবার ফ্রান্স ও সৌদি আরব আয়োজিত ‘দ্বি–রাষ্ট্রীয় সমাধান’ সংক্রান্ত জাতিসংঘ সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো বলেন, তাঁর দেশ গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে প্রস্তুত।

আল–জাজিরা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.