নতুন ৬টিসহ ১০টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ১০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার।
ব্যবসায়ীরা অবশেষে ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) পেয়েছেন। ইতিমধ্যে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলাও শুরু হয়েছে। এর ফলে চলতি সপ্তাহেই ভারতীয় ডিম দেশের বাজারে প্রবেশ করবে বলে আশা আমদানিকারকদের।
মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। কিন্তু আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) দেওয়ার দায়িত্ব আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের। তারা আইপি দিতে দেরি করে।
এর একটি বড় কারণ হলো অনেক দিন ধরে দেশে ডিম আমদানি হয়নি। তাই শুল্ক কাঠামো ঠিক করার পাশাপাশি অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে দুই সপ্তাহের বেশি দেরি হয়। শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি আইপি দেওয়ায় ভারত থেকে ১০ কোটি ডিম আমদানি হবে দেশে।
আমদানিকারকেরা জানান, আইপি জটিলতার কারণে তাঁরা এলসি খুলতে পারছিলেন না। গত সপ্তাহের শেষ দিকে আইপি পেয়েছেন। ইতিমধ্যে এলসি খুলে তাঁরা ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন। তাতে চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন দেশে প্রবেশ করবে আমদানি করা ডিম। তবে বাজারে কবে নাগাদ এই ডিম পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিত নয়। কারণ, ডিম মোড়কজাত করতে কিছুটা সময় লাগবে। তাই আমদানিকারকেরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি ঠিক কবে দেশের বাজারে এই ডিম পাওয়া যাবে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টাইগার ট্রেডিংয়ের মালিক সাইফুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষ। এখন ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ডিম পাঠানোর ওপর নির্ভর করছে কখন তা দেশে আসবে। যেহেতু ডিম পরিবহনে অতিরিক্ত সতর্কতার প্রয়োজন হয়, তাই কয়েক দিন সময় লাগবে। তবে এই সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ডিম আসবে।’
ব্যবসায়ীরা বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা ডিম দেশের বাজারে ঢুকলেই এটির দাম কমার সম্ভাবনা আছে। আমদানি করা প্রতিটি ডিম দেশের বাজারে ১০ টাকায় বিক্রি হতে পারে। এখন একেকটি ডিম কোথাও কোথাও সরকার নির্ধারিত ১২ টাকায় বিক্রি হলেও অধিকাংশ জায়গায় দাম এর চেয়ে বেশি।
সরকার ডিমের সঙ্গে আলু ও পেঁয়াজের দামও নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাজারে পণ্য তিনটির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর এগুলোর দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বেঁধে দেওয়া এ দর যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ায় প্রথম দফায় ১৮ সেপ্টেম্বর চার প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইমপোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স, টাইগার ট্রেডিং ও অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেড।
দ্বিতীয় দফায় ২১ সেপ্টেম্বর আরও ছয় প্রতিষ্ঠানকে ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে চিজ গ্যালারি, পপুলার ট্রেড সিন্ডিকেট, এমএস রিপা এন্টারপ্রাইজ, এসএম করপোরেশন, বিডিএস করপোরেশন ও মেসার্স জয়নুর ট্রেডার্স।
দেশে কার্যত ডিম আমদানি নিষিদ্ধ। তবে প্রয়োজন হলে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি দিতে পারে। ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও এ ক্ষেত্রে চারটি শর্ত আরোপ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মীম এন্টারপ্রাইজের মালিক ইয়ার হোসেন বলেন, অনেক দিন ধরে ডিম আমদানি না হওয়ার কারণে আইপি পেতে একটু সময় লেগেছে। তবে এখন দ্রুতই সরকারের নিয়ম মেনে দেশে ডিম আসবে।
কাস্টমস ট্যারিফের তালিকা (২০২৩-২৪) অনুযায়ী ডিমের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ রয়েছে। তাতে পণ্যটি আমদানিতে মোট শুল্ক-করভার ৩৩ শতাংশ। এই শুল্কহারেই ডিম আমদানির আইপি পেয়েছেন আমদানিকারকেরা। ফলে ১০০ টাকার ডিম আমদানিতে তাঁদের ৩৩ টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।