আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের দামামা

0
159
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস

বিশ্বে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল রোববার জাপানের হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্রের আণবিক বোমা নিক্ষেপের ৭৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব জাপানের শহর হিরোশিমায় যে ‘আণবিক বিপর্যয়’ ঘটেছিল, তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় ‘লিটল বয়’ নামের প্রথম আণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে তাৎক্ষণিক হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়। বছর শেষে নিহতের সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। তিন দিন পর নাগাসাকিতে আরেকটি আণবিক বোমা হামলায় নিহত হন ৭৪ হাজারের মতো জাপানি।

বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘পারমাণবিক যুদ্ধের দামামা আবারও বেজে উঠেছে, অবিশ্বাস ও বিভক্তি বাড়ছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় পারমাণবিক হামলার যে আশঙ্কা ছিল, তা আবার দেখা দিয়েছে। কিছু দেশ আবার বেপরোয়াভাবে পারমাণবিক শক্তির আস্ফালন দেখাচ্ছে; সভ্যতাবিনাশী এই অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছে।’

গত জুলাইয়ে নতুন শান্তি উদ্যোগ নেন জাতিসংঘের মহাসচিব। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে অবিলম্বে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গঠনের এবং এসব অস্ত্রের ব্যবহার ও বিস্তার রোধে বৈশ্বিক মূল্যবোধ শক্তিশালী করার বিষয়ে নিজেদের আবার অঙ্গীকারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

নিরস্ত্রীকরণ এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ-সংক্রান্ত বৈশ্বিক আইনগুলো শক্তিশালী করার জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের অঙ্গীকারের ওপর জোর দিয়ে গুতেরেস বলেন, পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলোকে অবশ্যই এই অস্ত্র ব্যবহার না করার বিষয়ে অঙ্গীকার করতে হবে।

রাশিয়ার নিন্দায় জাপান

এদিকে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে রাশিয়ার হুমকির নিন্দা জানিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা হামলার ৭৮তম বার্ষিকীতে গতকাল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ নিন্দা জানান।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধে পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার একমাত্র দেশ হিসেবে জাপান পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গঠনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। তবে তিনি বলেন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর বিভাজন এবং রাশিয়ার পারমাণবিক হুমকির কারণে এ পথে অগ্রসর হওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়েছে।

কিশিদা বলেন, এই পরিস্থিতিতে একটি পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের গুরুত্ব উপলব্ধির বিষয়ে চূড়ান্ত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার দিকে ফিরে আসাটা আরও বেশি প্রয়োজন। পারমাণবিক অস্ত্র হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যে ধ্বংসযজ্ঞ বয়ে এনেছে, কোনোভাবেই যেন তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। কিশিদার পরিবারও এই হিরোশিমা শহরেরই বাসিন্দা।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কিয়েভকে পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের ‘ভূখণ্ড রক্ষায়’ প্রয়োজনে হাতে থাকা সব অস্ত্র ব্যবহারের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সম্প্রতি দেশটি বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থানান্তর করেছে। রাশিয়ার এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকির বিষয়ে একাধিকবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের ‘পাল্টা আক্রমণ’ সফল হওয়া মানে রাশিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের দিকে ঠেকে দেওয়া। রাশিয়ার সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে ইউক্রেন যুদ্ধের কড়া সমর্থক বলে মনে করা হয়।

হিরোশিমা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ওই হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা, নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও রেকর্ড ১১১টি দেশের প্রতিনিধি। তাঁরা হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন এবং বিশ্বশান্তির আহ্বান জানান। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি রাশিয়া ও বেলারুশকে।

অনুষ্ঠানে অনেকেই কালো পোশাক পরে অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে নীরব প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। ঠিক ওই সময়ে হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমাটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.