আন্দোলনে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি: আনু মুহাম্মদ

0
22
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে যে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক অংশগ্রহণ করেছেন, দালিলিক বা ডকুমেন্টেশনের জায়গাগুলোতে তাঁদের পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য এই শ্রমিকদের কোনো স্বীকৃতিও দেওয়া হয়নি।

গতকাল প্রকাশনা সংস্থা ‘সমাজপাঠ’-এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও শ্রমজীবীদের হিস্যা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথাগুলো বলেন আনু মুহাম্মদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘(আন্দোলনে) যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের একটি বড় অংশ শ্রমিক। নিহতের সংখ্যাটিও শতাধিক। আবার আমরা যাঁদের শিক্ষার্থী হিসেবে চিনি, তাঁদের একটি বড় অংশ শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান।’ আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আবু সাঈদও শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান।

আন্দোলনে আহত শ্রমজীবীরা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই চিকিৎসা করার মতো অবস্থা নেই। এই শ্রমজীবীরা ও শ্রমজীবীদের সন্তানেরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাঁরা হাসপাতালে বিনা যত্নে পড়ে আছেন। তাঁদের অস্ত্রোপচার করতে, ওষুধপত্র কিনতে বলা হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা কোথা থেকে এগুলো কিনবেন?

আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশে সরাসরি শ্রমজীবী মানুষের শতকরা ৮৫ ভাগ সরাসরি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাজের মধ্যে নেই। পুলিশ-চাঁদাবাজদের তাণ্ডবের মধ্যে কাজ করেন তাঁরা। কাজের কোনো নিরাপত্তা নেই। তাঁদের বড় একটা অংশ যোগ দিয়েছিলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। কারণ, তাঁদের কাজ করতে হবে, রাস্তায় থাকতে হবে।

রাষ্ট্রে বা সমাজে চার ধরনের বৈষম্য দূর না হলে গণতান্ত্রিক শাসন সম্ভব হবে না বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, এই চার ধরনের বৈষম্য হলো শ্রেণিগত, জাতিগত, ধর্মীয় এবং লৈঙ্গিক বৈষম্য। অন্তর্বর্তী সরকার এসব বৈষম্য দূর করার কোনো আলোচনা এখনো শুরু করেনি।

আনু মুহাম্মদ বলেন, জিডিপির বিষয়ে সবাই জানেন যে এটা একটা গোঁজামিলের হিসাব। শ্রমজীবী মানুষ কতটুকু অবদান রাখছেন আর রাষ্ট্র তাঁদের জন্য কতটুকু বরাদ্দ করছে, তার স্বচ্ছ হিসাব পাওয়া যায় না। যেটুকু পাওয়া যায়, তাতে আকাশ সমান বৈষম্য রয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে হলে শ্রমজীবীদের দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ সময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহজাদ ফিরোজ বলেন, বৈষম্যহীন ব্যানারে যে আন্দোলনের সূত্রপাত, তার অন্তর্গত আকুতি হলো ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। দেশে ‘নিউ লিবারেল ইকোনমি’ চালু রাখবেন, জনগণের কোনো সেবা রাষ্ট্র দেবে না, তাহলে কীভাবে সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হবে?

লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট তুহিন খান বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা দেখছি যে বৈষম্য নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকদের ওপর যে বৈষম্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, সেটি নিয়ে আমরা তেমন কথা বলছি না। এমনকি তাঁদের নিয়ে এই সরকারেরও কোনো আন্তরিক উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না।’ তিনি প্রশ্ন করেন, মাত্র আট হাজার টাকা বেতনে একজন শ্রমিকের সংসার কীভাবে চলে?

আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন শ্রমিক সংগঠক সত্যজিৎ বিশ্বাস, পাটকলের শ্রমিক আলমগীর হোসেন, পোশাকশ্রমিক মো. উদয়, ছাত্র আন্দোলনের কর্মী ও চা-শ্রমিক সংগঠক তানজিলা বেগম, রিকশাশ্রমিক সংগঠক ওবায়দুল ইসলাম ও ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক সুজয় শুভ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.