সম্পদ ও ফৌজদারি মামলার সংখ্যায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। তবে বার্ষিক আয় জাহাঙ্গীরের চেয়ে তিন গুণ আজমত উল্লার। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হন। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাঁকে মেয়র পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করে। পরে তিনি আওয়ামী লীগে ফিরতে পারলেও মেয়র পদ আর পাননি।
পেশায় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের আয় কমেছে অবিশ্বাস্য গতিতে। গতকাল বৃহস্পতিবার আবারও তিনি মেয়র পদে প্রার্থিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এতে তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন মাত্র ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যদিও পাঁচ বছর আগে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ২ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। শুধু নগদ টাকা নয়, আগের চেয়ে জাহাঙ্গীরের সম্পদও অনেক ক্ষেত্রে কমেছে। অন্যদিকে পেশায় আইনজীবী আজমত উল্লা খানের বার্ষিক আয় ৩১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। স্থানীয় বঙ্গতাজ মিলনায়তনে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ১২ মেয়র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আট ধরনের তথ্যসংবলিত হলফনামা জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। হলফনামায় ভুল ও অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। যদিও নির্বাচন কমিশনকে এ ক্ষমতা প্রয়োগে বেশিরভাগ সময়ই উদাসীন দেখা যায়।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ফরিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী হলফনামা ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। তবে এগুলো পর্যালোচনার বিষয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
গাজীপুর রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করা হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আজমত উল্লা খানের আইন পেশা থেকে বার্ষিক আয় ৬ লাখ টাকা। এর বাইরে তাঁর সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক সুদ থেকে বার্ষিক আয় রয়েছে ৬২ হাজার ৫০৫ টাকা। কৃষি ও তৈরি পোশাকসহ তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বার্ষিক সম্মানী ভাতা পান ২৪ লাখ ৩ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাঁর লেখা দুটি বই বিক্রি থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আজমত উল্লা খানের হাতে রয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৬ টাকা। স্ত্রীর কাছে রয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫০৬ টাকা। তাঁর নিজের যানবাহন নেই। তবে স্ত্রীর একটি প্রাডো গাড়ি রয়েছে। নিজের কাছে স্বর্ণ আছে ২০ তোলা আর স্ত্রীর আছে ৩০ তোলা।
স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে তিনি জানিয়েছেন, কৃষিজমি তাঁর নেই। অকৃষি জমি নিজের রয়েছে ১৪০ দশমিক ৬৩৭৯ শতাংশ, স্ত্রীর নামে রয়েছে ২৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ। ৭ শতাংশ জমির ওপর তাঁর নির্মাণাধীন বাড়ি রয়েছে।
আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ তিনটি ফৌজদারি মামলা ছিল। এর মধ্যে টঙ্গী থানার হত্যা মামলাটি অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি এবং বাকি দুটি মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলমের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পাঁচ বছর আগে কৃষি খাত থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল দেড় লাখ টাকা, এবার কৃষি খাতে তিনি আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। বাড়ি ও দোকান ভাড়া আগে ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা, এবারও তিনি এই খাতে একই অঙ্ক দেখিয়েছেন। ব্যবসা থেকে আগে আয় দেখিয়েছিলেন ৯৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, এবার আয় দেখিয়েছেন মাত্র ৩ লাখ টাকা।
পাঁচ বছর আগে তাঁর স্থাবর সম্পদের মধ্যে দেখিয়েছিলেন ১৪১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এবারের হলফনামায় তাঁর কোনো কৃষিজমি নেই। আগের হলফনামায় অকৃষি জমি ছিল ৩৩ দশমিক ৭১২৫ শতাংশ। এবার তাঁর অকৃষি জমি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১৫ দশমিক ২১ শতাংশ। দালান বা আবাসিক সম্পদ আগে ছিল ৭ দশমিক ৪৩৭ শতাংশ। এবারের হলফনামায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ১৫ শতাংশ।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম হাতে নগদ টাকা রয়েছে ৪০ লাখ। পাঁচ বছর আগে ছিল ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ব্যাংকে তাঁর জমা রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আগে ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা। এবার তিনি তালিকাভুক্ত ও নন তালিকাভুক্ত শেয়ারের মূল্য দেখিয়েছেন অনারেবল টেক্সটাইলে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং জেড আলম অ্যাপারেলসে ২০ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। আগেরবারে তিনি ব্যবসায় বিনিয়োগ দেখিয়েছিলেন ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৭ টাকা, সঞ্চয়পত্রে ১০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলমের দুটি গাড়ি, ৩৫ ভরি স্বর্ণ, একটি বন্দুক ও একটি পিস্তল, ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং আসবাব আগের মতো রয়েছে।
পাঁচ বছর আগে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা না থাকলেও মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ ফৌজদারি মামলা হয়েছে আটটি।
এই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী না থাকলেও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি নেতা হাসান সরকারের ভাতিজা সরকার শাহ্নূর ইসলাম। তিনি তাঁর পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘গৃহ সম্পত্তি ভাড়া’। বছরে তিনি ৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা আয় করেন। এমবিবিএস সনদধারী এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি ফৌজদারি মামলা বিচার পর্যায়ে রয়েছে। তাঁর হাতে নগদ টাকা রয়েছে ২৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর কাছে রয়েছে ৬ লাখ টাকা। ব্যাংকে তাঁর জমা রয়েছে ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৩০৮ টাকা। তাঁর ৫৩ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।
স্থাবর সম্পদের ঘরে তিনি কিছু উল্লেখ না করলেও ৬ শতাংশ জমি বন্ধক রেখে পূবালী ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নিয়েছেন ৪৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪২৮ টাকা।
প্রার্থীদের তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে জমাদানকারীদের প্রার্থীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্বাচনে ঋণখেলাপি চিহ্নিত করতে তথ্য চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ইমেইলে তথ্য পাঠাতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) যুগ্ম পরিচালক শহিদুল ইসলাম এই চিঠি পাঠিয়েছেন।
এর আগে গাজীপুরসহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)।