আখাউড়া ইমিগ্রেশনে ঘুষ বাণিজ্যের অডিও-ভিডিও ফাঁস

0
12
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। ফাঁস হওয়া অডিও-ভিডিওতে ধরা পড়েছে ওসি, এসআই ও কনস্টেবলের যোগসাজশে ঘুষ লেনদেন এবং মামলার আসামিকে পাসপোর্টে সিল মেরে পার করিয়ে দেওয়ার ঘটনা।
 
ফাঁস হওয়া ৩ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের একটি অডিওতে শোনা যায়, যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষের টাকা কারা কত ভাগ পাবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। অন্যদিকে একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, যাত্রী না থাকা সত্ত্বেও ইমিগ্রেশনের ভেতরে এক এসআই পাসপোর্টে সিল মারছেন। পরে জানা যায়, ওই পাসপোর্টধারী মামলার আসামি ছিলেন।
 
যাত্রীদের অভিযোগ, মেডিকেল ভিসায় ভারত যেতে ৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দাবি করা হয়। টাকা না দিলে নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়। সূত্র বলছে, প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ ওঠে এই চক্রের হাতে।
 
স্থানীয়দের মতে, ইমিগ্রেশনের মতো আন্তর্জাতিক পয়েন্টে এ ধরনের দুর্নীতি শুধু যাত্রীদের হয়রানি নয়, দেশের ভাবমূর্তির জন্যও হুমকি। শুদ্ধি অভিযান ছাড়া এ চক্র থামানো সম্ভব নয়।
 
গত ২২ জুলাই কুমিল্লার দুই যাত্রীর কাছে এসআই আব্দুর রহিম ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় ভারতীয় ইমিগ্রেশনে তাদের তথ্য পাঠিয়ে দেন তিনি। ফলে আগরতলায় প্রবেশে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয় তাদের। শেষ পর্যন্ত ৫ হাজার টাকা দিয়ে ছাড় পান।
 
পরদিন ২৩ জুলাই সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে চার যাত্রীর কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকার রফাদফা হয়। কনস্টেবল দেলোয়ার লাইনে দাঁড় না করিয়ে সরাসরি পার করিয়ে দেন। টাকা লেনদেন হয় যাত্রী ছাউনিতে, যা সিসি ক্যামেরায় থাকার কথা।
 
তদন্তে জানা গেছে, কনস্টেবল দেলোয়ার দীর্ঘদিন ধরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ডেস্কে বসে কাজ করছেন। ওসি আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে একই উপজেলার বাসিন্দা হওয়ায় তার প্রভাবশালী অবস্থানের অভিযোগ রয়েছে। পর্যবেক্ষণে আরও দেখা গেছে, গত ১৫ দিনে সকাল ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে ওসি সাত্তারকে অফিসে পাওয়া যায়নি। বিকেল ৫টার আগেই তিনি চলে যান। এ ছাড়া নিষিদ্ধ যাত্রীকে অন্যের আইডি ব্যবহার করে পার করানোর ঘটনাও রয়েছে।
 
একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ইমিগ্রেশনের এক এসআই গোল ঘরে কয়েকজন যাত্রী রেখে তাদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন এবং তড়িঘড়ি করে সেগুলোতে সিল মারেন। সিল মারা শেষ হলে তিনি পাসপোর্টগুলো নিয়ে আবার যাত্রীদের সঙ্গে শূন্য রেখা পর্যন্ত পৌঁছে দেন।
 
আখাউড়া পৌর শহরের কলেজ পাড়ার বাসিন্দা কাঞ্চন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, চলতি আগস্ট মাসের ১০ তারিখে আমার ভাগ্নি অসুস্থ থাকায় ভাগ্নি জামাইকে সঙ্গে নিয়ে মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাওয়ার জন্য আখাউড়া ইমিগ্রেশনে যাই। সেখানে গিয়ে কর্মকর্তারা শুধু আমার ভাগ্নিকে যেতে দিতে চান, কিন্তু দুজনের ভিসা থাকলেও ভাগ্নি জামাইকে যেতে দিচ্ছিলেন না। নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করে একপর্যায়ে টাকা দাবি করেন। পরে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার পর তাদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়।
 
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে। কোনো যাত্রী হয়রানির শিকার হচ্ছেন না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.