আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে বনের মাটি বিক্রি করার অভিযোগ

0
144
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে অ্যাক্সকাভেটর দিয়ে উপকূলীয় বনের জায়গার মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। গত বুধবার তোলা ছবি

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে উপকূলীয় বন বিভাগের জায়গার মাটি কেটে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে। শুধু মাটি কেটেই ক্ষান্ত হননি তিনি, সেই মাটি অন্য স্থানে সরবরাহের জন্য বনের গাছ কেটে রাস্তাও বানিয়েছেন। তবে প্রকাশ্যে এভাবে মাটি বিক্রি হলেও এ বিষয়ে উপকূলীয় বন বিভাগ, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক সপ্তাহ ধরে উপজেলার হারামিয়া ইউনিয়নের কাছিয়াপাড় নৌঘাট এলাকায় মুরকুঞ্জা খালের দক্ষিণ পাশ থেকে মাটি কাটার কাজ চলছে। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত মাটি কাটার কাজ চলে। এরপর সেখান থেকে মাটিবোঝাই ট্রাক উপকূলীয় বনের ভেতরে তৈরি করা রাস্তা দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল কাদেরের ইটভাটা মামস ব্রিকসের ভেতরে প্রবেশ করে। এ ছাড়া গুপ্তছড়া ঘাটের প্রধান সড়ক হয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এসব মাটি সরবরাহ করেন আবদুল কাদের ও তাঁর লোকজন।

বনের জায়গার মাটি কাটার অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদের বলেন, হারামিয়া কমপ্লেক্স এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গা ভরাটের কাজ করেছেন তিনি। মাত্র দুই দিন মাটি কেটেছেন। তিনি বন বিভাগের কোনো গাছ কাটেননি। এলাকার ছোট ভাইয়েরা কিছু মাটি কেটেছেন। তবে তিনি তাঁদের নেতৃত্বে নেই বলে দাবি করেন।

সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতেও ট্রাক ভর্তি করে মাটি নিয়ে যেতে দেখা গেছে। সে মাটি ফেলা হচ্ছে থানা কার্যালয় লাগোয়া একটি পুকুরে। এত কাছে ঘটনাটি হলেও পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে। পুলিশ ও বন বিভাগ সব জানা সত্ত্বেও কিছু করে না। সব পক্ষই ‘হাত করা’ বলে অভিযোগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এ বিষয়ে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, থানার পাশে কোথাও মাটি ভরাট করা হচ্ছে না। থানা এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট করার কাজ চলছে। তবে এই মাটি কোথা থেকে আনা হচ্ছে, তা তিনি জানেন না। বন বিভাগ থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি। এর ফলে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।

জানা যায়, প্রতি ট্রাক মাটি ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করেন আবদুল কাদের। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লোক বসিয়ে রাখেন তিনি, যাতে প্রশাসনের লোকজন আসছে কি না, তাৎক্ষণিক খবর দেওয়া যায়।

এ বিষয়ে উপকূলীয় বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বন বিভাগের জায়গা থেকে মাটি ও গাছ কাটার বিষয়টি তাঁরা জানেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

তবে দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে বনের জায়গার মাটি কাটা, বন উজাড় করে রাস্তা তৈরির বিষয়ে না জানা দায়িত্ব অবহেলার মধ্যে পড়ে কি না, জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন ফোন রেখে দেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে সন্দ্বীপে ফসলি জমি, খাস জমি ও খাল থেকে উর্বর মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসব চলছে। শুষ্ক মৌসুমে ওই এলাকায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাঈন উদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সম্রাট খীসা দু-একটি অভিযান পরিচালনা করেও মাটি কাটা বন্ধ করতে পারেননি। বৃষ্টির কারণে এখন খাল ও কৃষিজমিতে পানি জমে থাকায় সেখানে মাটি কাটা বন্ধ হলেও উপকূলীয় এলাকা থেকে এখনো মাটি কাটার কাজ চলছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে উপকূলীয় এলাকা ও বন।

সন্দ্বীপের ইউএনও সম্রাট খীসা বলেন, উপকূলীয় এলাকা থেকে মাটি কাটার বিষয়টি তিনি জানেন না। বন বিভাগও বিষয়টি তাঁকে অবগত করেনি। তিনি মাটি কাটা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

একাধিক ব্যক্তি নাম না প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল কাদের মাটি কাটার মূল হোতা। তাঁর অনুসারী ছাত্রলীগের এক নেতাসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী এ কাজে জড়িত। গণমাধ্যমে বিষয়টি এলে এ ধরনের অপরাধে লোকদেখানো অভিযান হয়। তবে তা পুরোপুরি বন্ধ হয় না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.