আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে যাঁরা পুকুরে ফেলেছেন, তাঁরা ছাত্রলীগের কেউ নন

0
100
আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আবদুস সালামকে পেটানো ও লাঞ্ছনার ঘটনার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁর অনুসারীরা। আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজৈর উপজেলার কালীবাড়ি এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আবদুস সালামকে (৫০) পিটিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁরা ছাত্রলীগের কেউ নন, তাঁরা ছাত্রলীগ থেকে ‘বহিষ্কৃত’ বলে দাবি করেছে জেলা ছাত্রলীগ। তবে ‘বহিষ্কৃত’ ছাত্রলীগের ওই নেতা-কর্মীদের দাবি, যাঁরা খন্দকার আবদুস সালামের ওপর হামলা করেছেন তাঁরা সন্ত্রাসী। যাঁদের বহিষ্কৃত বলা হচ্ছে, তাঁরা বহিষ্কৃত নন, তাঁরা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মী।

মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ হাওলাদার  বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে অবাঞ্ছিত মন্তব্য ও দলীয় কর্মকাণ্ড বিরোধী আচরণ করায় আগেই হাসিবুল হাসানকে (পিয়াল) জেলা কমিটির সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পিয়াল ছাড়াও তাঁর সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে আমরা বহিষ্কার করেছি। যাঁরা আওয়ামী লীগ নেতার ওপর হামলা করেছেন, তাঁরা ছাত্রলীগের কেউ নন, পিয়াল বর্তমানে বহিষ্কৃত ছাত্রনেতা। তাঁর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁর ভাইও ছাত্রলীগের কেউ নন। যদি তাঁরা ছাত্রলীগের পরিচয় দেন, তাহলে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। রাজৈর উপজেলার ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক সবুজ আকন।’

খন্দকার আবদুস সালামকে রাজৈর উপজেলার আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা উল্লেখ করে বায়েজিদ হাওলাদার বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ যে কর্মসূচি ঘোষণা করবে, ছাত্রলীগ এতে একাত্মতা ঘোষণা করবে।’
এ বিষয়ে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের সভাপতি হাসিবুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, ‘ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জেলা ছাত্রলীগের আমাকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার নেই। একমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি বহিষ্কার করতে পারে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাঁদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আমাকে নিয়ে এ ধরনের কথা বলে যাচ্ছেন। তাঁরা আমার নেতৃত্বকে ভয় পান, প্রতিহিংসার জন্য আমাকে অব্যাহতি দিয়েছেন।’

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আবদুস সালাম। কার্যালয়ে ঢুকতেই তাঁর মোটরসাইকেলের গতি রোধ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান। পরে হাসিবুলের ভাই আশিকুর রহমান ওরফে পাভেলসহ ১০ থেকে ১২ জন মিলে খন্দকার আবদুস সালামকে বেদম পিটুনি দেন। একপর্যায়ে হাত-পা ধরে তাঁকে উপজেলা চত্বরের পুকুরে ফেলে দেন। এ সময় তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মাদারীপুরে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। একটি পক্ষ কেন্দ্রীয় কমিটির অনুকূলে থাকলেও অন্য পক্ষটি স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায়। জেলা ছাত্রলীগের অনুমোদিত রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক সবুজ আকন। অন্য কমিটির সভাপতি হাসিবুল হাসান ওরফে পিয়াল ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর হক। জাহিদ হাসান বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটিতে না থেকেও যাঁরা ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে অন্যায় অপকর্ম করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা আইনিব্যবস্থা নেব।’

এদিকে খন্দকার আবদুস সালামকে পেটানো ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজৈর উপজেলার কালীবাড়ি এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও খন্দকার আবদুস সালামের অনুসারীরা। সেখানে রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক অংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা হাসান ও তাঁর সহযোগীরাও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করে স্লোগান দেন। এতে ওই মহাসড়কে যানজট তৈরি হয়।

এ বিষয়ে রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় ঘোষ বলেন, হামলার ঘটনায় এখনো থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে। অভিযোগ না দিয়েই বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে অবরোধকারী ব্যক্তিদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.