জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি বা বাংলাদেশ সরকারি কেনাকাটা কর্তৃপক্ষ আইন পাস হতে পারে। ইতিমধ্যে আইনটি পাসের জন্য বিল আকারে জাতীয় সংসদে পাঠানো হয়েছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও আইনটি যাচাই–বাছাইয়ের কাজ শেষ করেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের সঙ্গে এই আইন পাসের সম্পর্ক আছে।
আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার কথা আছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তার শেষ কিস্তির ২৫ কোটি ডলার পেতেও সরকারি কেনাকাটায় আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার শর্ত আছে।
আইনের খসড়া অনুযায়ী, আইনটির ভালো দিক হলো বাংলাদেশ সরকারি কেনাকাটা কর্তৃপক্ষ চাইলে দরপত্র প্রক্রিয়ার যেকোনো সময় যেকোনো নথি তলব করতে পারবে। এমনকি গোপন দলিলও তলব করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আর খারাপ দিক হলো কোনো অনিয়ম পেলে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ পরামর্শ, সুপারিশ ও দিকনির্দেশনার মধ্যে।
গত ৫ জুলাই পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জাতীয় সংসদে আইনটি পাসের জন্য বিল আকারে উত্থাপন করেন। এরপর তা যাচাই–বাছাইয়ের জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
কর্তৃপক্ষের কাঠামো
বাংলাদেশ সরকারি কেনাকাটা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হবেন পরিকল্পনামন্ত্রী। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকবেন এ ছাড়া অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার একজন প্রধান নির্বাহীও নিয়োগ দেওয়া হবে। কয়েকজন পরিচালক থাকবেন। বাংলাদেশ সরকারি কেনাকাটা কর্তৃপক্ষ বোর্ডের মেয়াদ হবে তিন বছর।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনটি খুবই সংক্ষিপ্ত হবে। তবে এই অধিবেশনেই এই বিল পাস হতে পারে।
বর্তমানে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) পুরো সরকারি কেনাকাটার বিষয়টি নজরদারি করা হয়। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সরকারি কেনাকাটা বা ই-জিপি সিস্টেমে দরপত্রপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
নতুন কর্তৃপক্ষ হলে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ থাকবে। নিয়মিত কাজের জন্য এই কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে না।
সরকারি কেনাকাটার প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্যে আনতে ২০০৬ সালে সরকারি কেনাকাটা আইন প্রণয়ন করা হয়। পরে ২০০৮ সালে সরকারি কেনাকাটা বিধিমালা করা হয়। এর ওপর ভিত্তি করে গঠন করা হয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)।
জানা গেছে, বর্তমানে ১ হাজার ৪০০–এর বেশি সরকারি সংস্থা ই-জিপির মাধ্যমে কেনাকাটা করে থাকে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রায় ৮০ শতাংশই সরকারি কেনাকাটা। এসব কেনাকাটার ৬৫ শতাংশ ই-জিপির মাধ্যমে হয়। আর পুরো বাজেটের প্রায় ৪৫ শতাংশ ই-জিপির মাধ্যমে হয়।
আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের শর্তে কর্তৃপক্ষ
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের যে ঋণ বাংলাদেশ নিয়েছে, তার একটি শর্ত ছিল সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনতে ব্যবস্থা নেওয়া। বিশ্বব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিটের (ডিপিসি) সর্বশেষ কিস্তির ২৫ কোটি ডলার পাওয়ার শর্তও একই রকম। চলতি অর্থবছরে এই ২৫ কোটি ডলার ছাড় করার কথা রয়েছে।
তবে এই কর্তৃপক্ষ গঠনের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) তৎকালীন মহাপরিচালক ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে আইনটির খসড়া তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের মধ্যে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় তা হয়নি।