অস্ত্রবিরতির মাঝেও গোলাগুলি, খার্তুমে আতঙ্কে বাংলাদেশিরা

0
154
সুদানে দুই বাহিনীর লড়াইয়ের মধ্যে জ্বলছে রাজধানী খার্তুমের একটি ভবন

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত মঙ্গলবার সুদানে ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি শুরু হয়েছিল। কিন্তু সুদানের সেনাবাহিনী এবং আধা সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) রাজধানী খার্তুমসহ অনেক জায়গায় তা মানছে না। এমন অবস্থায় স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি সুদানের রাজধানী খার্তুমে থাকা হাজারখানেক বাংলাদেশির দিন কাটছে উদ্বেগ আর আতঙ্কে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে ফিরতে তাঁরা মরিয়া।

দুই দশকের বেশি সময় ধরে সুদানে আছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সুলতান দানেশ আলী। যুদ্ধকবলিত আফ্রিকার দেশটিতে একাধিক যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী এই বাংলাদেশি এবারের পরিস্থিতিকে একেবারেই আলাদা বলে মনে করছেন। বাংলাদেশি কমিউনিটি, সুদানের সভাপতি সুলতান দানেশ আলী বুধবার বিকেলে বলেন, তিনি পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-স্বজনদের নিয়ে তিন দিন আগে খার্তুমের কেন্দ্রস্থল থেকে একটু দূরে ওমদুরমানে সরে এসেছেন। দু-এক দিনের মধ্যে খার্তুম থেকে আরও দূরে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আজ (বুধবার) সকালে প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী আনতে বের হয়েছিলাম। আমরা তখন গাড়িতে বসে। আমাদের তল্লাশি চলছে। হঠাৎ একটা সেতুর কাছাকাছি রকেট আঘাত হানে। অস্ত্রবিরতির কথা বলা হলেও কার্যত তা মানা হচ্ছে না। গোলাগুলি আগের চেয়ে কমলেও বন্ধ হয়নি। ফলে অর্থ, খাবার, পানি আর বিদ্যুতের সংকটসহ সব মিলিয়ে অনেকের মতো আমরাও চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।’

গত ২০ বছরে খার্তুমে দরজির দোকান চালাচ্ছেন সুলতান দানেশ আলী। সুদানে তাঁর তিনটি দোকান (শোরুম) রয়েছে। তিনি জানান, ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই শুরুর পরপর বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ১৮ এপ্রিল থেকে বিদ্যুৎ–সংযোগ চালু হলেও তা সাধারণ সরবরাহের তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ব্যাংক, দোকানপাট, অফিস-আদালতসহ প্রায় সবকিছুই বন্ধ। এই অবস্থা আরও কয়েক সপ্তাহ চলতে থাকলে চরম মানবিক সংকটের আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশের এই ব্যবসায়ী।

দুই দশকের বেশি সময় ধরে সুদানে আছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সুলতান দানেশ আলী
দুই দশকের বেশি সময় ধরে সুদানে আছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সুলতান দানেশ আলী

 

পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরতে গিয়ে সুলতান দানেশ আলী জানান, বিবদমান গোষ্ঠী বিশেষ করে আরএসএফের সদস্যরা মানবিক সংকট তৈরির লক্ষ্যে খাবারের জোগান ধ্বংস করেছে। প্রতিনিয়ত চুরি, ছিনতাই হচ্ছে। চরম আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। প্রাণের ভয়ে লোকজন এখন খার্তুম থেকে পালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

সেখানকার বাংলাদেশি লোকজন খার্তুম ছাড়ার পাশাপাশি দেশে ফেরার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। খার্তুমের একটি দরজি দোকানের কর্মী মো. রাসেল মিয়া ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ফোন পেয়ে আমি নিজে এবং আমার চার সহকর্মীর নাম ও পাসপোর্ট নম্বর দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছি। আমরা শুনেছি সুদানে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে আমাদের ২৯ বা ৩০ এপ্রিল দেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।’

খার্তুমের একটি দরজি দোকানের কর্মী মো. রাসেল মিয়া
খার্তুমের একটি দরজি দোকানের কর্মী মো. রাসেল মিয়া

 

খার্তুমের পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশি তরুণ রাসেল মিয়া বলেন, ‘গোলাগুলি থামেনি। বিবদমান কোনো পক্ষই অস্ত্রবিরতি মানছে না। আমরা আগের বাসা থেকে কয়েক দিন আগে একটু দূরে সরে এসেছি। আজ আমরা কয়েকজন মিলে আগের বাসা থেকে মালামাল আনার জন্য যাই। যাওয়ার পথে দেখি আমাদের বাসার পাশের একটি তিনতলা ভবনের ওপরের অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বোঝা যায় এটি দিন দুয়েক আগের ঘটনা। আমরা দুটি জঙ্গিবিমান টহল দিতে দেখেছি। প্রতি মুহূর্ত আতঙ্কে আছি।’

মো. রাসেল মিয়া জানান, সংঘাত শুরুর পর তাঁদের মালিক অ্যাপের মাধ্যমে আড়াই শ ডলার পাঠান। সেটা দিয়ে খাবারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনেছেন। তাঁদের কাছে এখন সপ্তাহখানেকের রসদ আছে। তিনি বলেন, খাবারের সংকট থাকলেও কয়েক গুণ বেশি দামে তা পাওয়া যায়। তবে পানির সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুরুর দিকে এক বোতল পানির খোঁজে তিন থেকে চার কিলোমিটার পথও পাড়ি দিতে হয়েছে।

সুদানের রাজধানী খার্তুমে সংঘাতের মধ্যে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এসব গাড়ি
সুদানের রাজধানী খার্তুমে সংঘাতের মধ্যে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এসব গাড়ি

 

সুদানের বাংলাদেশিদের মতে, বর্তমানে ওই দেশে থাকা বাংলাদেশির সংখ্যা হাজার দেড়েকের বেশি হবে না। এর মধ্যে খার্তুমে এখন হাজারখানেক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের লোকজনকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সুদানে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) তারেক আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, ‘পোর্ট অব সুদান হয়ে বাংলাদেশের লোকজনকে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরানোর প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। আশা করছি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাহাজভাড়া চূড়ান্ত করে শুরুতে ৫০০ বাংলাদেশিকে পাঠানোর দিনক্ষণ ঘোষণা করা যাবে।’

রাহীদ এজাজ

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.