অস্ত্র সমর্পণ শুরু করেছে কুর্দি বিদ্রোহীরা

0
22
কুর্দি বিদ্রোহীরা

কুর্দি বিদ্রোহী সংগঠন কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ শুরু করেছেন। আজ শুক্রবার ইরাকের কুর্দি–অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলে এ অস্ত্র সমর্পণ শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে তুরস্কের বিরুদ্ধে পিকেকের প্রায় চার দশকের সশস্ত্র সংগ্রামের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। এ সংঘাতে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

পিকেকের অস্ত্র সমর্পণ উপলক্ষে সোলাইমানিয়ায় ছোট আকারের আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। ইরাকি ও কুর্দি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এ সময় তুরস্কের কয়েকজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। চলতি গ্রীষ্মজুড়ে নিরস্ত্রীকরণের এ প্রতীকী আনুষ্ঠানিকতা চলবে।

গতকাল ২০ থেকে ৩০ জন পিকেকে সদস্য তাঁদের অস্ত্র ধ্বংস করেন। কারও হাতে অস্ত্র সমর্পণ করার পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট বড় পাত্রে অস্ত্রগুলো রেখে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ধ্বংস করা অস্ত্রের মধ্যে একে-৪৭ মতো অস্ত্র ছিল।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের দেশের পায়ে পরানো রক্তাক্ত শিকল সম্পূর্ণরূপে ছিঁড়ে ফেলা ও ছুড়ে ফেলার মুহূর্ত।’ এ পদক্ষেপের ফলে পুরো অঞ্চল উপকৃত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে পিকেকের প্রতিষ্ঠাতা কারাবন্দী আবদুল্লাহ ওজালান তাঁর সংগঠনের সদস্যদের প্রতি অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানান। সংগঠনটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা এবং তুরস্কের সরকারের সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিনের সংঘাতের ইতি টানারও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

অস্ত্র সমর্পণ করার পর সেগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। শুক্রবার উত্তর ইরাকের সোলাইমানিয়ায়
অস্ত্র সমর্পণ করার পর সেগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। শুক্রবার উত্তর ইরাকের সোলাইমানিয়ায়ছবি: রয়টার্স

১৯৯৯ সাল থেকে ইস্তাম্বুলের কাছে একটি দ্বীপ এলাকার কারাগারে বন্দী আছেন পিকেকে নেতা আবদুল্লাহ ওজালান। এ আহ্বান জানানোর আগে তুরস্কের কুর্দিপন্থী পিপলস ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (ডিইএম) পার্টির একটি প্রতিনিধিদল কারাগারের তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। পিকেকে ও তুরস্কের সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করছে দলটি।

এরপর গত মে মাসে সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় পিকেকে। পিকেকে–সমর্থিত বার্তা সংস্থা ফিরাতের গত জুনে ধারণা একটি ভিডিও চলতি সপ্তাহের শুরুতে সম্প্রচার করা হয়। এতে বলা, গোষ্ঠীটির কারাবন্দী নেতা আবদুল্লাহ ওজালান এ মুহূর্তকে ‘সশস্ত্র সংঘাত থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও আইনের শাসনের পর্যায়ে একটি স্বেচ্ছা পদার্পণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে এ পদক্ষেপকে তিনি একটি ‘ঐতিহাসিক অর্জন’ বলেও মন্তব্য করেছেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেশির ভাগ সময়ই পিকেকে নিষিদ্ধ ছিল। তুরস্কের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরাক সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৮৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চলা সশস্ত্র সংঘাতে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। এ সহিংসতার কারণে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে হাজার হাজার কুর্দি আরও উত্তর দিকের শহরগুলোয় সরে যেতে বাধ্য হন।

এ সংঘাতের প্রভাব শুধু তুরস্কেই নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোতেও গভীরভাবে অনুভূত হয়েছে, বিশেষ করে ইরাক, সিরিয়া ও ইরানে। এসব দেশে পিকেকে ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর উপস্থিতি রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.