ভারত থেকে প্রতিবছর অস্কারে সিনেমা জমা দেওয়া নিয়ে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। ‘আরআরআর’, ‘কেজিএফ-২’ নাকি ‘কাশ্মীর ফাইলস’—কোনটা যাচ্ছে অস্কারে, এই প্রশ্নকে ছাপিয়ে ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া গত মাসে গুজরাটি সিনেমা ‘ছেল্লো শো’ অস্কারে পাঠিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে হঠাৎ সবার নজরে আসা সেই ছবিটিই জায়গা করে নিল অস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায়। কী আছে এই ছবিতে? গুজরাটের একটি ছোট গ্রামের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এতে। যেখানে বেড়ে উঠেছেন নলিন। এই সিনেমার মূল চরিত্রে আছে ৯ বছরের এক শিশু। তার নাম সময়। সময়ের বাবা ট্রেনের যাত্রীদের কাছে চা বিক্রি করে। সময় নিজেও চা বিক্রি করে। সেই ট্রেনের পাশ দিয়েই বয়ে যায় যেন সময়ের স্রোত। রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে সময়ের সময় চলে যায়। এভাবে সে একসময় সিনেমার প্রেমে পড়ে যায়। নিয়মিত সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে গিয়েই নানা ঘটনা ঘটে। সেই গল্পই ‘ছেল্লো শো’।
যা ইংরেজি নাম ‘লাস্ট ফিল্ম শো।’ সিনেমার ৬ কিশোরের একজন সম্প্রতি মারা গেছে। এ বছর এই শাখায় অস্কারের জমা পড়ে ৯২টি সিনেমা। এই সিনেমার মধ্যে বিচারকদের ভোটের মাধ্যমে শর্ট লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে ১৫টি দেশের সিনেমা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ভ্যারাইটি গত আগস্টেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, ‘আরআরআর’ অস্কারে পাঠানো হলে ২১ বছর পর ভারত থেকে অস্কার মনোনয়ন পেতে পারে ছবিটি। এ ছাড়া ভারতের অনেকে বলছিলেন মনোনয়নই নয়, অস্কারে সেরা ছবিও হতে পারে ব্যবসাসফল এনটিআর জুনিয়র, রাম চরণের ছবিটি। পরে অবশ্য বিদেশি ভাষার সিনেমা বিভাগে জমা দেওয়া হয় ‘লাস্ট ফিল্ম শো’। এর পরও থেমে থাকেনি ‘আরআরআর’-এর প্রযোজক। হলিউডে অফিশিয়াল মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাটি। সেই হিসাবে সরাসরি অস্কারের সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা সহঅভিনেতা, সেরা সহঅভিনেত্রীসহ প্রায় সব বিভাগের জন্য জমা দেওয়া হয়। তবে প্রথম সারির কোনো শাখায় মনোনয়ন পাবে কি না, এখনই বলা যাচ্ছে না। এর মধ্যে এসএস রাজামৌলির ছবি অস্কারে ‘নাটু নাটু’ গানটির জন্য ‘সেরা গান’ বিভাগে সংক্ষিপ্ত তালিকায় ১৫টি গানের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।
একসঙ্গে ভারত থেকে তথ্যচিত্র বিভাগে আগে কখনোই দুটি কাজ মনোনয়ন পায়নি। এবার রেকর্ড গড়ল ‘অল দ্য ব্রিদস’ ও ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইসপারস’। অল দ্য ব্রিদস’ এর আগে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গোল্ডেন আই’ (ল’অয়েল ডি’অর) বিভাগে পুরস্কৃত হয়। প্রবাসী বাঙালি পরিচালক শৌনক তাঁর ছবিটি তৈরি করেছেন দিল্লির পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বাতাস এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতার অন্ধকারের মধ্যে পাখিদের টিকে থাকার গল্প নিয়ে। এই ছবির কেন্দ্রে মোহাম্মদ সাউদ আর নাদিম শেহজাদ দুই ভাই। দিল্লির ওয়াজিরাবাদে তাঁদের বাড়ি। যেখানে বেজমেন্ট তাঁরা গড়ে তুলেছেন আহত পাখিদের জন্য একটি হাসপাতাল। বিশেষ করে বিলুপ্ত প্রায় কালো চিলদের উদ্ধার ও চিকিৎসা করেন তাঁরা। সেই সূত্রে নতুন মোড় নেয় গল্পে। এই শাখায় ১৫টি তথ্যচিত্র মনোনয়ন পেয়েছে।
অন্যদিকে ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইসপারস’-এ দেখানো হয়েছে আদিবাসী এক দম্পতি ও একটি অনাথ হাতির গল্প। এই দম্পতি হাতিটিকে পাওয়ার পরে তার যত্ন নেয়, তাকে খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখাসহ সব দায়িত্ব পালন করে। ৪১ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে একসময় দেখা যাবে, হাতির মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে যায় এই আদিবাসী দম্পতি। এর মধ্যে দিয়ে পরিচালক দক্ষিণ ভারতের বন্যদের প্রতি ভালোবাসা ও বন্য পশুর সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন, যা ভাগাভাগি করে নিয়েছে এই আদিবাসী দম্পতি। এটি পরিচালনা করেছেন কার্তিকি গনসালভেস। এটিই তাঁর ক্যারিয়ারের একমাত্র। ১০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্রের মধ্যে এটি জায়গা করে নিয়েছে।
আজ ভোরে ঘোষণা করা হয়েছে অস্কারের ১০টি ক্যাটাগরির তালিকা। এই তালিকায় আরও রয়েছে মেকআপ অ্যান্ড হেয়ারস্টাইল, সাউন্ড, ভিউজুয়াল ইফেক্টস, অরিজিনাল স্কোর, অরিজিনাল সং, এনিমেটেড শর্ট ও লাইভ অ্যাকশন শর্ট। এবার লাইভ অ্যাকশন শর্ট বিভাগের বাংলাদেশ থেকে নুহাশ হুমায়ূনের ‘মশারি’ অংশ নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত স্বল্পদৈর্ঘ্যটি সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পায়নি। এই তালিকায় থাকা কাজগুলোর মধ্যে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার মনোনয়ন পাবে সেরা ৫টি কাজ। মনোনয়ন পাওয়া ৫টি সিনেমার তালিকা জানা যাবে আগামী ২৫ জানুয়ারি। এই তালিকার জন্য ভোট শুরু হবে ১২ থেকে ১৭ জানুয়ারি। এ বছর অস্কার আসর বসবে ১৩ মার্চ। সেদিনই জানা যাবে চূড়ান্ত বিজয়ীদের নাম।
এর আগে ১৯৫৭ ও ১৯৮৮ সালে ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ও ‘সালাম বম্বে’ অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিল। তারপর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে সর্বশেষ ২০০১ সালে বিদেশি ভাষার ক্যাটাগরিতে অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিল আমির খান অভিনীত ‘লগান’। এর মধ্যে আর কোনো সিনেমা মনোনয়ন পায়নি। এবার চারটি কাজের একটি মনোনয়ন পাবে এটি অনেকটাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়। পাবে কি না, সেটা অবশ্য সময়ই বলে দেবে। তার আগে জেনে রাখা দরকার, ভারত থেকে তথ্যচিত্র বিভাগে ৯৪ তম অস্কারে মনোননয় পেয়েছিল ‘রাইটিং উইথ ফায়ার।’ এটি পুরস্কার পায়নি। তথ্যচিত্রটি পরিচালনা করেছেন সুস্মিত ঘোষ ও রিন্টু থমাস।