চীনে বিয়ে ও সন্তান জন্মের হার ক্রমে কমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জন্মহার বাড়াতে দেশটির একটি স্পার্ম ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অর্থের বিনিময়ে শুক্রাণু দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। চীনের হেনান প্রদেশের হিউম্যান স্পার্ম ব্যাংক এ আহ্বান জানিয়েছে।
এ ছাড়া বোনাস হিসেবে স্পার্ম ব্যাংকটি একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে প্রাদেশিক রাজধানী ঝেংঝুতে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণও জানিয়েছে। এই প্রতিযোগিতার লক্ষ্য সর্বোচ্চ শুক্রাণুর সংখ্যা ও সবচেয়ে শক্তিশালী শুক্রাণু সংগ্রহ করা। ১০ সেপ্টেম্বর এ উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়া হয়।
চীনের ২৭টি স্পার্ম ব্যাংকের মধ্যে হেনান স্পার্ম ব্যাংক একটি। যাঁরা গর্ভধারণ করতে পারেন না বা যাঁরা বংশগত রোগে আক্রান্ত, তাঁদের সহায়তা করে এই স্পার্ম ব্যাংক। এই স্পার্ম ব্যাংকের উদ্যোগ দেখে দেশের অন্যান্য স্পার্ম ব্যাংকগুলোও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে একই ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। শুক্রাণু দিতে উৎসাহিত করতে শত শত মার্কিন ডলার দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেনান স্পার্ম ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা আশা করেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী শুক্রাণু দান করবেন। কারণ, তাঁদের শুক্রাণুর গুণমান সাধারণ মানুষের চেয়ে ভালো।
হেনান স্পার্ম ব্যাংক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে জানিয়েছে, পরিবেশদূষণ ও কাজের চাপের কারণে দেশে শুক্রাণুর সার্বিক মান খারাপ হয়েছে। এ কারণে অনেক বিবাহিত দম্পতি বন্ধ্যত্বের শিকার হচ্ছেন, যা তাঁদের জন্য পরিবার ও সমাজে বৈষম্য এনেছে।
প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, ‘রক্তদানের মতো শুক্রাণুদানও একটি মানবিক কাজ। এটি বন্ধ্যা দম্পতিদের জন্য সুখবর আনতে পারে। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই সমাজে অবদান রাখতে শুক্রাণু দান করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ঝেংঝুতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া একজন শিক্ষার্থী প্রতিবার শুক্রাণু দেওয়ার জন্য পরিবহনভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় ২ হাজার ৯৫২ টাকা (২৭ মার্কিন ডলার) করে পাবেন। শিক্ষার্থীরা ২ মাসের মধ্যে ৮ থেকে ২০ বারের বেশি শুক্রাণু দান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যাঁরা ২০ বার শুক্রাণু দান করবেন, তাঁদের অতিরিক্ত পুরস্কার হিসেবে প্রায় ৩১ হাজার ৪৭১ টাকা (২ হাজার ১০০ ইউয়ান) পাবেন। এ ছাড়া প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা প্রফেশনাল ফার্টিলিটি মূল্যায়নপত্রও পাবেন।
এই প্রতিযোগিতায় দুজনকে বিজয়ী নির্বাচন করা হবে। সর্বোচ্চ শুক্রাণুর সংখ্যার দিক দিয়ে একজন ও সবচেয়ে শক্তিশালী শুক্রাণুর দিক দিয়ে একজনকে নির্বাচিত করা হবে।
আয়োজকেরা বলছেন, বিজয়ীদের সম্পর্কে তথ্য ও প্রতিযোগিতার বিশ্লেষণ এমনভাবে জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা হবে, যাতে অংশগ্রহণকারীদের নাম গোপন রাখা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘শুক্রাণু গ্রহণের জন্য দৈনিক কোটা সীমিত। কখনো কখনো কোটা পূর্ণ হয়ে যায়। তাই আমরা অংশগ্রহণকারীদের আগাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট করার পরামর্শ দিই।’
চীনের আইন অনুযায়ী, দাতার শুক্রাণু ব্যবহার করে প্রযুক্তির মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুরা দাতার সঙ্গে কোনো আইনি সম্পর্ক রাখে না। শুক্রাণুদাতারা ওই সন্তান লালনপালন করতে বাধ্য নন, তাঁদের অভিভাবকত্বও নেই।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে গত ৬০ বছরের মধ্যে প্রথমবার উল্লেখযোগ্য হারে জনসংখ্যা কমে গেছে। জন্মহার বাড়াতে দেশটির সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এই কারণে জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক প্রণোদনা এবং শিশুর যত্নের সুযোগ-সুবিধা বাড়াচ্ছে।
গত জুনে প্রকাশ করা চীনের সরকারি তথ্য বলছে, ২০২২ সালে চীনে বিয়ে করার হার রেকর্ড পরিমাণে কমে ৬৮ লাখে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮৬ সালের পর এটাই সর্বনিম্ন বিয়ের হার। ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর ৮ লাখ কম বিয়ে হয়েছে।
এ কারণে কনের বয়স ২৫ বছর বা তার কম হলে চলতি মাসে ১ হাজার ইউয়ান বা প্রায় ১৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় চ্যাংশান কাউন্টি।