২০২০ সালের কথা। বগুড়া সদরের ঘোড়াধাপ হাট থেকে ৮৬ হাজার টাকায় শাহিওয়াল জাতের নাদুসনুদুস একটি বাছুর কেনেন হাজরাদীঘি গ্রামের আকরাম হোসেন (৪০)। বাড়ি আনার পর বাছুরটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আকরামের ছোট্ট মেয়ে অর্থি। বাছুরটির সঙ্গে ভীষণ ভাব জমে যায় মেয়েটির। নিজ হাতে খড়, ভাত, কুঁড়া খাওয়াত। বাছুরটির নাম রাখে সে ‘নবাব’।
পরের বছর কোরবানির ঈদে নবাবকে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকায় বেচে দেন আকরাম। সেদিন বাজারে অর্থিও গিয়েছিল। ক্রেতার হাতে গরুটি তুলে দেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়েটি। সেই ছবি ও খবর ওই বছরের ৩১ জুলাই ‘অর্থি কেন কাঁদছিল’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। তখন সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। পরের দিন ছিল ঈদ। সেদিনও গরুটির জন্য কাঁদছিল মেয়েটি। অর্থির কান্না থামাতে ঈদের পরের দিন পাঁচ মাস বয়সী লাল রঙের শাহিওয়াল জাতের একটি এঁড়ে বাছুর কিনে দেওয়া হয় এইচএসবিসি ব্যাংকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী মো. মাহবুবুর রহমানের উদ্যোগে। আর প্রথম আলো ট্রাস্ট অর্থিকে দেয় এক লাখ টাকার শিক্ষাবৃত্তি।
নতুন সঙ্গী পেয়ে খুশি যেন ধরে না মেয়েটার। গরুর নাম রাখে সে ‘ছোট নবাব’। এরপর সময় গড়িয়েছে। ছোট নবাবও বিক্রি হয়ে গেছে গত বছর কোরবানির পশুর হাটে দেড় লাখ টাকায়। গত বছর হাট থেকে আরেকটি শাহিওয়াল জাতের বাছুর কেনা হয়। ৯৫ হাজার টাকা দামে কেনা সেই বাছুরের নাম রাখা হয় ‘মেজ নবাব’। গত সোমবার ঘোড়াধাপ কোরবানির হাটেই মেজ নবাবকেও বিক্রি করা হয় ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকায়। নতুন আরেকটি বাছুর কিনতে অর্থির বাবা গতকাল মঙ্গলবার হাটে গেছেন।
অর্থির মা আইরিন সুলতানা বললেন, শৈশব থেকেই গরুর সঙ্গে অন্য রকম সখ্য ও বন্ধুত্ব অর্থির। এটা শুরু হয়েছিল করোনার সময় স্কুল বন্ধ থাকার সময়। নবাব, ছোট নবাব ও মেজ নবাব—সব বন্ধুকেই পরম মমতায় আদর–যত্ন করেছে মেয়েটা। খাওয়ানো থেকে শুরু করে সারাক্ষণ গরুর সঙ্গে খুনসুটি করেছে।
অর্থির পুরো নাম আশরাফি সুলতানা (১৩)। বগুড়া সদর উপজেলার নুনগোলা ইউনিয়নের হাজরাদীঘি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে এখন। বাবা আকরাম হোসেনের এক খণ্ড বসতভিটা ছাড়া সহায়–সম্বল বলতে কিছুই নেই। আকরাম বললেন, সংসারের খরচ চালাতেই গরু পুষে এক বছরের মাথায় বেচে দিয়ে আবার নতুন বাছুর কেনেন। এবারও আরেকটি বাছুর কিনবেন। এবারেরটির নাম মেয়ে আগেই ঠিক করে রেখেছে, ‘বাংলার নবাব’।