লোকসভা ভোটের আগে ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নে সরকার যে তৎপর, খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা স্পষ্ট করে দিলেন। গতকাল মঙ্গলবার মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে বিজেপি কর্মকর্তাদের এক অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিবারের প্রত্যেকের জন্য আলাদা নিয়ম থাকলে যেমন সংসার চালানো যায় না, তেমনই দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা আলাদা আইন থাকলে দেশ চালানো কঠিন হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, সংবিধান সবার জন্য এক আইন করার কথা বলেছে। সুপ্রিম কোর্টও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা বলেছেন। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, লোকসভার ভোটের আগে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে ধর্মীয় মেরুকরণে বিজেপি সচেষ্ট। কারণ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে সবচেয়ে বেশি আপত্তি মুসলমানদের।
মধ্যপ্রদেশে গিয়ে এই প্রসঙ্গ তোলাও তাৎপর্যপূর্ণ। এই রাজ্যে চলতি বছরের শেষে ভোট। সেখানে শাসক বিজেপির হালও বেশ নড়বড়ে। মনে করা হচ্ছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রসঙ্গ তুলে মোদি সেখানে হিন্দুদের জোটবদ্ধ করতে চাইছেন।
বিজেপি নীতিগতভাবে সব সময়ই যে তিনটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে, তার অন্যতম এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। অন্য দুটি বিষয় ইতিমধ্যেই তারা আয়ত্ত করে ফেলেছে। অযোধ্যায় রামের জন্মভূমি থেকে বাবরি মসজিদ হটিয়ে মন্দির তৈরির কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। জম্মু–কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা ৩৭০ অনুচ্ছেদও তারা খারিজ করে দিয়েছে। বাকি রয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। সম্প্রতি আইন কমিশনও এ বিষয়ে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা ও নাগরিক সমাজের মতামত জানতে চেয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে তা কমিশনকে জানাতে হবে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব বোঝাচ্ছে, দেরি না করে সরকার এই অধরা কাজও সেরে ফেলতে চায়।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রসঙ্গে বলার সময় মোদি টেনে আনেন তিন তালাকের কথাও। সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছেন। তবু মোদি বলেন, হুট করে যাঁরা তিনবার ‘তালাক’ উচ্চারণ করে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটান, তাঁরা এবং তাঁদের পক্ষে যাঁরা রয়েছেন, সবাই মুসলমান নারীদের সঙ্গে অন্যায় করছেন। তিন তালাকের প্রভাব শুধু নারীদের ওপরই পড়ে না, পুরুষদেরও বিব্রত ও ব্যতিব্যস্ত করে। তালাক পাওয়া নারীকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হলে তাঁর বাবা, ভাই বা অন্য আত্মীয়দের ওপর কী প্রভাব পড়ে, ভেবে দেখুন। এরপরই মোদি বলেন, এই প্রথা ইসলামের অপরিহার্য অঙ্গ হলে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, কাতার কিংবা মিসরের মতো মুসলমান দেশেও তা থাকত। অথচ ওসব দেশে এই প্রথা নেই।
ভারতে অভিন্ন ফৌজদারি বিধি থাকলেও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নেই। এই বিধি চালু হলে বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, সম্পত্তির অধিকার বা উত্তরাধিকারের মতো বিষয়গুলো এক আইনের তলায় চলে আসবে। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী তা নির্ধারিত হবে না। ভারতীয় সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদেও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রচলনের জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। কিন্তু ধর্মীয় ঐকমত্যের অভাবে আজ পর্যন্ত তা সম্ভবপর হয়নি।