ইউজিসি এ নতুন নীতিমালা করেছে। বাস্তবায়নের জন্য পাঠানো হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
নতুন সরকারি (পাবলিক) বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে আইন পাসের পরপরই ভাড়া করা বাড়ি বা যেখানে-সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। এদিকে শুরুতে জমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে উপাচার্যের সম্পৃক্ততা থাকছে না। প্রকল্প পরিচালকের অধীন ন্যূনতম অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার পর উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে। এরপর উপাচার্য আনুষঙ্গিক কাজ করে ইউজিসির অনুমোদনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করবেন।
এমন একটি নীতিমালা করেছে দেশের উচ্চশিক্ষা দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
ইউজিসির উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২১ মে প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণ কমিশনের সভায় ‘নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পূর্বের নীতিমালা’ অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন এটি বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
ইউজিসির কাগুজে নির্দেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপেক্ষিত, মানছে না অনেকেই
বর্তমানে দেশে ৫৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১১২টি। সরকারের নীতি হলো, প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। বর্তমানে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আইন পাসের পরপর একজন উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। উপাচার্যের অধীনেই অবকাঠামোগত ও শিক্ষা কার্যক্রমের কাজগুলো একসঙ্গে চলতে থাকে। শুরুর দিকে অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ ও নিয়োগ নিয়ে কোনো কোনো উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আছে।
ইউজিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আইন হওয়ার পরপরই কোনো মতে একটি ব্যবস্থা করে কোনোমতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে দেওয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাড়া করা বাড়িতে বা অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিছু কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয়। অনেক শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) সম্মান শেষ করার পরও নিজস্ব ক্যাম্পাস পান না। এমনকি যেসব অবকাঠামো সুবিধার মধ্যে পড়াশোনা করা হয়, তা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গেও বেমানান। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও তাঁদের কাছে অভিযোগ এসেছে। সবকিছু বিবেচনা করে তাঁরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ করে এই নীতিমালাটি করেছেন। এটি বাস্তবায়ন হলে উচ্চশিক্ষায় মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে তাঁরা মনে করেন।
যা আছে নীতিমালায়
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। জমি অধিগ্রহণ শেষে ইউজিসির সুপারিশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করবে। প্রকল্প পরিচালক ন্যূনতম ভৌত অবকাঠামোসহ ক্যাম্পাস উন্নয়নের ব্যবস্থা করবেন।
ন্যূনতম ভৌত অবকাঠামো বলতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বিবেচনায় শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা, কমপক্ষে দুটি লেকচার থিয়েটার, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ গবেষণাগার, গ্রন্থাগার, ন্যূনতম কম্পিউটার (চারজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি), কমপক্ষে একটি মাল্টিপারপাস হল, শিক্ষকদের বসার ব্যবস্থা, অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন অংশ নেওয়ার সুবিধাসহ কমপক্ষে দুটি সভাকক্ষ, অফিসকক্ষ, ১০০ থেকে ১৫০ জনের বসার ব্যবস্থাসহ একটি মিলনায়তন, খেলাধুলার ব্যবস্থা, টয়লেটের ব্যবস্থাসহ এ ধরনের আরও বেশ কিছু অবকাঠামোগত ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, উপাচার্য নিয়োগের পরপরই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে না। উপাচার্য নিয়োগের পর প্রথম বছরটি ‘প্রতিষ্ঠার বছর’ হিসেবে বিবেচিত হবে; যেটি হবে প্রয়োজনীয় একাডেমিক উন্নয়নের প্রস্তুতিকাল। এ সময় ইউজিসির সহায়তায় উপাচার্য আনুষঙ্গিক কাজ করবেন। তারপর ইউজিসি থেকে একাডেমিক কার্যক্রমের অনুমোদন নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
ইউজিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য নতুন উপাচার্যের কিছু জনবলের প্রয়োজন হয়। সেটি সাময়িকভাবে ইউজিসি থেকেও দেওয়া যেতে পারে।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি নীতিমালাটি তৈরি করেছে। সদস্য হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার অধিকারী, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক আফরোজা পারভীন এবং সদস্যসচিব ছিলেন ইউজিসির উপপরিচালক মৌলি আজাদ।
অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘নীতিমালাটি করার মূল উদ্দেশ্যে হলো শিক্ষার যথাযথ মান বজায় রাখা ও শিক্ষাজীবনের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের একটি উপযোগী পরিবেশ দেওয়া।’