অফ সিজনের ‘পরিযায়ী ক্রিকেটার’

ইংল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্রে ঘোরাও হয়, খেলাও হয়

0
110
এসেক্সে এপিং ক্রিকেট ক্লাবে খেলছেন ইমরুল কায়েস

ইংলিশদের কাছে ইমরুল কায়েসরা পরিযায়ী ক্রিকেটার। বাংলাদেশ থেকে বছরের এ সময়ে ইংল্যান্ডের স্থানীয় লিগে খেলেন তাঁরা। দেশের ক্রিকেটের অফ সিজনে বিদেশে খেলতে যাওয়া ক্রিকেটারের এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মোহাম্মদ আশরাফুল ও এনামুল হক জুনিয়রদের পেছনে লাইন বড় হয়ে বিস্তৃত হচ্ছে ইংল্যান্ডজুড়ে। বিলেতের ক্রিকেটের বাজারে জায়গা করে নেওয়া শামসুর রহমানরা সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেও যাচ্ছেন খেলার জন্য। খেলা, ভ্রমণ, ছুটি– সব মিলিয়ে জুনায়েদ সিদ্ধিকীদের অফ সিজন প্রবাসে ভালোই কাটে। দেশের ক্রিকেটের মতো সম্মানী না পেলেও বিলেতে খেলে খুশি তাঁরা।

ইমরুল খেলেন প্রিমিয়ার লিগ ডিভিশন ওয়ানে। সাব্বির রহমান, শামসুর রহমান, জহুরুল ইসলাম অমি, জুনায়েদ সিদ্দিকী, এনামুল হক জুনিয়র ডিভিশন টুতে। ইংল্যান্ডের ডিস্ট্রিক্টগুলোর ক্লাব ক্রিকেটের শীর্ষ লিগকে বলা হয় প্রিমিয়ার লিগ। একজন বিদেশির সঙ্গে দু’জন পেশাদার ক্রিকেটার খেলানোর সুযোগ রেখেছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। কাউন্টি বা মাইনর কাউন্টির নিচের ধাপ এটি। মূলত ৫০ ও ১০০ ওভারে ম্যাচ খেলা হয় প্রিমিয়ার লিগে। সপ্তান্তের খেলা, অপেশাদার লিগ।

বাংলাদেশের পেশাদার ক্রিকেটারদের ইংল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্রের এই অপেশাদার লিগে খেলতে যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে ইমরুল কায়েস বলেন, ‘দেশে এখন খেলা নেই। অফ সিজনে প্র্যাকটিসেরও সুযোগ থাকে না। এ কারণে ইংল্যান্ডে প্রিমিয়ার লিগে এপিং ক্রিকেট ক্লাবে খেলি। ঢাকা লিগের মতো না হলেও ভালো একটা সম্মানী পাই। গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, খেলার ভেতরে থেকে উপার্জন করতে পারছি। পরিবার নিয়ে ইংল্যান্ডে ছুটি কাটাচ্ছি। অথচ এ সময়ে দেশে থাকলে কিছু করা হতো না। অনুশীলন করতে না পেরে মন খারাপ হতো।’

প্রবাসে ক্রিকেট খেলার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে পাকাপাকি বসবাসের পথঘাট চিনে নিতে পারছেন অনেকেই। জাতীয় দলের সাবেক বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র (খেলছেন মাইটি টাইগার্স) গত বছর থেকে পরিবার নিয়ে পাকাপাকি থাকছেন ইংল্যান্ডে। কোচিং করাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হয়েছেন আফতাব আহমেদ। নাসির হোসেনও যুক্তরাষ্ট্রে ঘরবসতি গড়তে চলেছেন। ঢাকার ক্রিকেট ছেড়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত খেলেন পেসার আবুল হোসেন রাজু। ক্যারিয়ারের পড়ন্তের দিকে থাকা ঢাকার অনেক ক্রিকেটারই ছুটছেন ইংল্যান্ড-আমেরিকায়।

জাতীয় দলের সাবেক পেসার তাপস বৈশ্য কাজ করেন নিউইয়র্কের একটি ক্রিকেট একাডেমিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলেও পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে ধরে রেখেছেন তিনি। তাঁর দেখাদেখি দেশটিতে পাড়ি জমাচ্ছেন ক্রিকেটার ও কোচরা।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তাপস বৈশ্য বলেন, ‘এখানে ক্রিকেট খেলেন প্রবাসীরা। মূলত প্রবাসী ভারতীয়রাই খেলেন, লিগ, ক্লাব ও একাডেমি চালান। বাংলাদেশিদেরও ক্রিকেট লিগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে খেলে তেমন টাকা-পায়সা পাওয়া যায় না। বাঙালিদের দলেই তো খেলেন সবাই। থাকা-খাওয়া ছাড়াও ভালোমতো কেনাকাটা করে দেশে ফেরার মতো টাকা দেয়। মূলত ছুটি কাটাতে এসে ক্রিকেট খেলেন।’

তাপস জানান, বাংলাদেশের ৩০ জনের মতো ক্রিকেটার ভিসা পেয়েছেন। যাঁরা সময় সুযোগমতো খেলতে যাবেন দেশটিতে। ইলিয়াস সানি, আরিফুল ইসলাম, নাসির হোসেনের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। সৈয়দ রাসেল যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ধরবেন ২ জুন। ইংল্যান্ড-আমেরিকা যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন আরও অনেকেই। ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার ক্রিকেটে বড় একটা পার্থক্য দেখতে পান সৈয়দ রাসেল। ইংল্যান্ডে খেলা হয় ‘ন্যাচারাল উইকেটে’। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট লিগ চলে ম্যাট উইকেটে।

এনামুলের মতে, ‘তরুণ ক্রিকেটাররা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলতে এলে বাংলাদেশের জন্য লাভ হতো। একা একা চলার এবং থাকার দক্ষতা বাড়ত। এগুলো আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। সামাজিক হতে সাহায্য করে। ইংলিশ বলা শিখে যেত। মৌসুমের প্রথম দুই মাস তো খুব ঠান্ডা থাকে, বল সুইং করে। ব্যাটারদের জন্য শেখার উপযুক্ত জায়গা ইংল্যান্ড।’

যুক্তরাষ্ট্রের মটর ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের খেলোয়াড়ের সবাই বাংলাদেশি। জাতীয় দলের চারজন ক্রিকেটার খেলাতে পারে একটি দল। সৈয়দ রাসেল জানান, এ বছর চালু হচ্ছে আরও একটি লিগ– মিশিগান ওপেন। এর অর্থ হলো বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের বাজার বড় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.