অজ্ঞাত লাশের পাশাপাশি পুড়ে অঙ্গার হওয়া লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হচ্ছে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে।
সিআইডি বলছে, ২০১৪ সালে ডিএনএ ল্যাব স্থাপনের পর গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪২৩টি মামলার আলামত গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ১৬৬টি মামলার ডিএনএ প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে মতামত দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধ প্রমাণে ডিএনএ পরীক্ষার গুরুত্ব বাড়ার কারণে ল্যাবে মামলার আলামতের সংখ্যা বাড়ছেই। প্রতিষ্ঠার প্রথম বছর ডিএনএ ল্যাবে ২০৫টি মামলার আলামত হিসেবে ডিএনএ নমুনা আসে। ২০২২ সালে (অক্টোবর পর্যন্ত) ৫ হাজার ১৬৮ মামলায় ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের অনুরোধ আসে। অর্থাৎ ৮ বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়েছে ২৫ গুণের বেশি।
সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ইমাম হোসেন বলেন, কোনো ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত ও অপরাধের সঙ্গে সন্দেহভাজন ব্যক্তির সম্পৃক্ততা শনাক্ত করতে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করে তা বিশ্লেষণ করা হয়। দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করা, পিতৃত্ব-মাতৃত্ব নির্ণয়েও ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা এবং আদালতে অপরাধ প্রমাণে ডিএনএ পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ডিএনএ ল্যাবের ৫৮ শতাংশ মামলাই ধর্ষণের
২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে ২০ বছর বয়সী তরুণীকে দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। চারজন ওই তরুণীকে ছাত্রাবাসে গাড়িতেই চারবার ধর্ষণ করেন। পরে পুলিশ গাড়ি থেকে ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ করে। আলামত সিআইডির ডিএনএ পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করা হয়। এর মাধ্যমে ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়। মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন।
সিআইডি বলছে, ডিএনএ ল্যাবে আসা ৫৮ শতাংশ মামলার আলামতই ধর্ষণ মামলার। অর্থাৎ ডিএনএ ল্যাবে আসা ১৭ হাজার ৪২৩টি মামলার আলামতের মধ্যে ১০ হাজার ১০৫টির আলামত ধর্ষণসংক্রান্ত।
দুই হাজারের বেশি পিতৃত্ব বিরোধ নিষ্পত্তি
গত ৮ বছরে ডিএনএ ল্যাবে আসা মামলার আলামতের ১২ শতাংশ পিতৃত্ব বিরোধসংক্রান্ত। এ হিসাবে প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে ২ হাজার ৯০টি মামলা এসেছে পিতৃত্ব বিরোধের। এ তথ্য জানিয়ে সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের মামলার অধিকাংশ ভুক্তভোগী ধর্ষণের শিকার হয়ে সন্তানের মা হয়েছেন। তাঁদের একটা বড় অংশ আবার শিশু।
অঙ্গার লাশেরও পরিচয় জানতে পারছেন স্বজনেরা
২০২১ সালের ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় আগুনে ৫২ জনের মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে ৫১ জনের লাশ পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়ায় দেখে চেনার উপায় ছিল না কোন লাশটি কার। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সিআইডি ৫১টি লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে অঙ্গার হওয়া ৩২ লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে সিআইডির ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে।
পুড়ে অঙ্গার হওয়া লাশের পাশাপাশি পচা-গলা লাশ ও অজ্ঞাতপরিচয় লাশের পরিচয় শনাক্তেও ডিএনএ পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই। গত ৮ বছরে সিআইডি ৪ হাজার ৫২৯টি অজ্ঞাতপরিচয় লাশের পরিচয় শনাক্ত করেছে তাদের ডিএনএ পরীক্ষাগারে।
ডিএনএ ল্যাবের আছে কিছু সীমাবদ্ধতাও
ডিএনএ পরীক্ষাগারের নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলেও জানান সিআইডির কর্মকর্তারা। এর মধ্যে কীট, রাসায়নিক ও কনজ্যুমেবল সামগ্রীর সংকট রয়েছে। পরীক্ষাগারে জায়গাসংকটের পাশাপাশি আছে জনবলসংকট। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব ছাড়া ডিএনএ ব্যাংকের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও দুর্বলতা রয়েছে।